শনিবার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৪   পৌষ ৭ ১৪৩১

রফাদফায় পার পাচ্ছে সিলভার ক্রিসেন্ট

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৩০ মার্চ ২০২৪  

 

নগরীর চাষাঢ়ায় বেসরকারি সিলভার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে বহিরাগত কথিত ডাক্তার আব্দুল্লাহ আল মামুনের তত্ত্বাবধায়নে টনসিলের অপারেশনের সময় ভূল চিকিৎসায় মেহেনাজ আক্তার আনিকা (১৬) নামে এক কিশোরীর মৃত্যুর ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন লবিংয়ের মাধ্যমে প্রায় সব ম্যানেজ করেছে বলে শোনা যাচ্ছে যাকে ঘিরে ঘটনার ৬ দিনেই পরিস্থিতি নিরব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ঘটনাস্থলে ভূল চিকিৎসায় নিহত আনিকার স্বজনরা ডাক্তারের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ তুলে হাসপাতালে ভাঙচুরসহ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসকসহ এক ম্যানেজারকে মারধর করেন'।

 

এ সময় পুলিশ গিয়েও তাদের সামাল দিতে পারেনি। তবে শুরুতে নিহত কিশোরীর স্বজনরা ডাক্তারদের বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত দেখা গেলে ও ধীরে ধীরে বিষয়টি রফাদফার দিকে মোড় নিচ্ছে। জানা গেছে, হাসপাতাল, কর্তৃপক্ষ এবং যেই ডাক্তারদের বিরুদ্ধে থানায় দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ করা হয় তারা সবাই রোগীর স্বজনদের ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। তা ছাড়া উচ্চ পর্যায়ের সকলকেই ম্যানেজ করা হয়ে গেছে এবার ভুক্তভোগী পরিবারের দিকেই টার্গেট করে রফাদফার পায়তারায় মরিহা হয়ে উঠেছে হাসপাতালের ১১ জন মালিক পক্ষ।

 

এর আগে গত (২৪ মার্চ) মেহরাজের বাবা আমানত উল্লাহ বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় ডাক্তার আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং ডাক্তার হালিম চৌধুরীর বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। কিন্তু ধীরে ধীরে সব আপসের দিকে যাওয়ায় বিষয়টি পুরোই উল্টোর দিকে। এদিকে সুধিমহল বলছে যদি এভাবেই ভূল চিকিৎসায় রোগী মেরে কিছু অর্থের মাধ্যমে পাড় পাওয়া যায় তাহলে সামনে আরো বেসরকারি হাসপাতালগুলো বেপারোয়া হয়ে উঠবে।

ঘটনার দিন জানা গিয়েছিলো, গলায় টনসিলের সমস্যায় দীর্ঘদিন ভুগছিলেন মেহেনাজ আক্তার আনিকা। পরে স্থানীয় এক ফার্মেসী দোকানের মালিকের পরার্মশ অনুযায়ী চিকিৎসা করানোর জন্য, সিলভার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে সহকারী অধ্যাপক ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুনের কাছে নিয়ে আসা হয়। পরে রাত ১০টায় ডাক্তার অপারেশন করায়। অপারেশন শেষে ভোরে তার জ্ঞান ফিরলে তিনি আকার ইঙ্গিতে বোঝান তার ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট হচ্ছে।

 

পরে চিকিৎসককে জানালে দুইজন ডিউটি মহিলা নার্স দফায় দফায় দুইবার ইনজেকশন পুশ করেন। তারপরেই তিনি ছটফট করতে থাকেন আর তার হাত-পা-মুখ নীল হতে থাকে। এরপর সকাল ৯টায় তার কোন সারা শব্দ না পেলে তার বাবা আমানত উল্লাহ বুঝতে পারে তার মেয়ে মারা গেছেন। পরে মালিকপক্ষের কয়েকজন তার বাবাকে আশ্বাস দেয় না তার মেয়ে মরেনি তাকে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হবে।

 

পরবর্তীতে মালিকপক্ষের একজন ৯৯৯ নাম্বারের কল দিয়ে এ্যাম্বুলেন্স এনে তাদের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে রফাদফা করে ঢাকা মেডিকেলে রেফার করে দায়সারা হতে চাইলে ও স্বজনদের গড়িমসিতে তা আর হয়ে উঠেনি। তখনই হাসপাতালে মালিকপক্ষের একজনকে রেখে হাসপাতাল খালি রেখে পালিয়ে যায় মালিকপক্ষের বাকি লোকেরাসহ রিসিপশনে থাকা বেশ সদস্য ও নার্স। এ সময় নিহতের স্বজনরা হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসকসহ দুইজনকে মারধর এবং হাসপাতালের ভেতরে বিক্ষোভ ও ব্যাপক ভাংচুর চালায়।

 

এমতাবস্থায় স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে আসছিলো হাসপাতালের চারপাশ। পরে সেই ৯৯৯ থেকেই কল পেয়ে সদর থানা পুলিশ সিলভার ক্রিসেন্ট হাসপাতলে উপস্থিত হয়। সে সময় স্বজনদের উত্তেজনা দেখে হাসপাতলের আবাসিক চিকিৎসকসহ পাঁচজনকে আটক করে। তবে কথিত অভিযুক্ত চিকিৎসক ডা.আব্দুল্লাহ আল মামুন পালিয়ে গেলে ঘটনাস্থল থেকে তাকে পায়নি পুলিশ। পরবর্তীতে নিহতের বাকি স্বজনরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসলে উত্তেজনা আরো বৃদ্ধি পায় তখন তারা প্রথমে রোগীকে কোন ডাক্তার কি কি ঔষধ ও ইনজেকশন দিয়েছিলো সেটা দেখার জন্য রোগীর প্রেসক্রিপশনের ফাইল চাইলে প্রথমে সেটা পাওয়া যায় না বলে মালিকপক্ষ নানা ছলছাতুরির পর সেটা বের করা হয়।

 

পরে তা পুলিশের কাছে সোপর্দ করলে স্বজনরা সেটা দেখাতে চান কিন্তু পুলিশ দেওয়া যাবে না বলে নিচে চলে গেলে স্বজনরা ও পুলিশের মধ্যে এক ধরনের ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। কিন্তু ৬ দিনে যে হারে সেই উত্তেজিত পরিস্থিতি ঠান্ডা হলো কিভাবে। তা ছাড়া মাত্র ১৩ দিনের ব্যবধানে দুটি মৃত্যুর ঘটনায় জেলা জুড়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে। অভিযোগ ‘গোড়াতেই গলদ’। এমনকি সিভিল সার্জনের ও নিরব ভূমিকা তা নিয়ে চলছে নানা অভিযোগ।

 

সূত্র বলছে, কথিত ডাক্তার আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে এর আগেও বেশ কয়েকবার এমন অভিযোগ উঠেছিল। তবে প্রতিবারই তিনি মোটা অংকের টাকা দিয়ে মারা যাওয়া রোগীর স্বজনদের সাথে আপস করে ফেলেন। এবারও ঠিক তেমনটা করার পায়তারা করছে বলে জানা গেছে।

 

সেই ঘটনায় নিহত আনিকার বাবা আমানত উল্লাহ জানিয়েছিলেন, আমার মেয়েকে টনসিলের চিকিৎসার জন্য ডাক্তার আব্দুল্লাহ আল মামুনের তত্ত্বাবধায়নে সিলভার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ভর্তি করি। অপারেশনের জন্য ৮০ হাজার টাকা চুক্তি হয় তার সাথে। শনিবার ২৩ মার্চ রাত ১টার দিকে আমার মেয়ের অপারেশন হয়। পরে ডাক্তার মেয়েকে কিছু খাওয়াতে নিষেধ করে। রাত ৩টার দিকে ব্যথায় অর্তনাদ করতে থাকলে নার্সরা এসে ব্যাথার ইঞ্জেকশন দেয়। এরপর সকালে ওর অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। ব্যথায় ছটফট করতে থাকে এবং দেহ নিস্তেজ হয়ে যায়। পুরো অপারেশনের পর থেকে আমার মেয়ের খোঁজ নেয়নি ডাক্তার। তার অবহেলার কারণেই আমার মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। আমরা এই কথিত ডাক্তার ও এই হাসপাতালের সকল কর্মকর্তাদের যথাযথ শাস্তি চাই।

 

এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. মশিউর রহমান যুগের চিন্তাকে বলেন, বর্তমানে নারায়ণগঞ্জে দফায় দফায় বিভিন্ন হাসপাতালে রোগী মারা যাওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। ডাক্তারের হাতে রোগী মারা যেতে পারে এটা স্বাভাবিক কিন্তু মানুষ স্বাভাবিক ব্যাপারটা অন্য ভাবে দেখছে। এই জন্য আমরা ডাক্তার আল মামুনসহ অভিযুক্ত সকল ডাক্তারের বিষয়ে তদন্ত করবো, তাদের সার্টিফিকেট, তার অভিজ্ঞতা যথাযথ আছে কিনা। তিনি আরো বলেন, সিলভার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে রোগী মারা যাওয়ার ঘটনা আমাদের তদন্ত অবহৃত রয়েছে।

 

রফা দফার বিষয়ে জানতে চাইলে সদর থানার অফিসার ইনচার্জ শাহদাত হোসেনের মুঠোফোনে একাধিক ফোন করলে ও তার ফোনে কল যায়নি। এস.এ/জেসি
 

এই বিভাগের আরো খবর