মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১

লকডাউনে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ভালো নেই নগরবাসী

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ১৫ এপ্রিল ২০২১  

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে চলতি মাসের শুরুতে সরকারের দেয়া ৭ দিন ব্যাপী লকডাউন শেষ হতে না-হতে আবারো আজ থেকে সারাদেশে শুরু হয়েছে কঠোর লকডাউন। এই লকডাউন চলবে আগামী ২১ এপ্রিল পর্যন্ত। এতে শুধু শিল্প কারখানা ছাড়া গণপরিবহন ও সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। চার দেয়ালের ভেতর আবারো আটকা পড়বে সাধারণ মানুষ। তাই দীর্ঘ এই লকডাউনের ফলে নারায়ণগঞ্জ শহরের বিভিন্ন ব্যবসা বাণিজ্য থেকে শুরু করে প্রায় প্রতিটি সেক্টরই অর্থনৈতীক সংকটের মধ্যে পড়তে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে পবিত্র মাহে রমজানকে কেন্দ্র করে বাজারে চাল ও তেলসহ বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে যাওয়ায়, বিপাকে পড়েছে নগরীর স্বল্প আয়ের মানুষজন। 


 
বাংলাদেশের বড় বড় দেশীয় পোশাক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ শহরের নয়ামাটি এলাকায়। এখান থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকারি ও খুচরা পোশাক বিক্রেতারা টি-শার্ট, পেন্ট এবং বাচ্চাদের যাবতীয় জামাকাপড় কিনতে আসে। তাই রমজানের আগে নয়ামাটির পোশাকের দোকানগুলোতে স্বাভাবিক ভাবেই বেচাকেনার চাপ বেশি থাকে। তবে এবার দীর্ঘ লকডাউনের ফলে গতকাল মঙ্গলবার নয়ামাটির বিভিন্ন পোশাকের দোকানে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গণপরিবহন বন্ধ থাকায় দূর-দূরান্ত থেকে ক্রেতারা এবার নারায়ণগঞ্জে আসতে পারেনি। তাই বিক্রি কম হওয়ায় তাদের মাঝে দেখা দিয়েছে চরম অর্থনৈতীক সংকট।

 


নয়ামাটির রাশু মার্কেটে পাইকারি এবং খুচরা পোশাক বিক্রেতা আব্দুল রহমান ট্রেডার্সের মালিক বাদশা মিয়া বলেন, ‘ঈদকে সামনে রেখে এবার প্রায় ৩০ লাখ টাকার পোশাক তৈরী করেছিলাম আমরা। ভেবেছি যে, ২০ থেকে ২৫ রোজার মধ্যেই সেটা বিক্রি করে ফেলবো। কিন্তু লকডাউনে আমাদের বেচাকেনাতে যেই একটা ধাক্কা আসলো, এটা বলে বোঝাতে পারবোনা। বিক্রি একেবারেই বন্ধ শ্রমিক কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধ করবো কিভাবে সেটা নিয়ে খুব চিন্তার মধ্যে আছি।’

 


রফিকুল ইসলাম নামে অন্য এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘গত বছর লকডাউনের জন্যে আমার ২০ লাখ টাকার মাল (পোশাক) বিক্রি হয়নি। সেগুলো এখনো গোডাউনে পড়ে আছে। ডিজাইন পুরনো হয়ে যাওয়ায় বিক্রি করতে পারছিনা। তাই ক্ষতি কাটিয়ে উঠবার জন্য এবার কিছু নতুন ডিজাইনের মেয়েদের পোশাক তৈরী করেছি। কিন্তু আবারো রমজানের আগে লকডাউন চলে আসায় ক্রেতারা নারায়ণগঞ্জে ঢুকতে পাড়ছেনা! তাই বেচাকেনাও নেই। এখন কি করবো সেটাই ভেবে পাচ্ছিনা।’


 
অন্যদিকে, গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় পবিত্র মাহে রমজানকে সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জ শহরের বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারগুলোতে বেড়েছে যিনিস পত্রের দাম। তাই বাজারে প্যাকেটজাত পণ্য হাতে নিয়েই আগে প্যাকেটর গায়ে লিখা মূল্যের দিকে চোখ বুলাচ্ছেন ক্রেতারা। সাধারাণ ক্রেতারা জানান আমাদের আয় রোজগার না বাড়লেও লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে চলেছে যিনিসপত্রের দাম। এতে সবকিছু আমাদের হাতের নাগালে চলে যাচ্ছে।


 
এ বিষয়ে নগরীর দিগুবাবুর বাজারে কথা হয় শেফালী বেগম নামে এক ভদ্র মহিলার সাথে। তিনি বলেন, ‘রোজাকে কেন্দ্র করে বুট, পেঁয়াজ, তেল ও মুরগীর দাম অনেক বেড়েছে। সবকিছু যেনো হাতের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। এদিকে লকডাউনের জন্য স্বামীর ব্যবসার অবস্থাও ভালো-না। তাই যিনিসপত্র কম কম করেই খরিদ করছি, কি আর করার’
                             


আল-আমিন নামে বাজারে অন্য এক ক্রেতার সাথে কথা হলে তিন বলেন, ‘জিনিসপত্রের দাম আমাদের হাতের নাগালের বাইরে। ৫ লিটারের একটি তেলের বোতল কিনতেই পকেট থেকে প্রায় ৫০০ টাকা চলে গেছে। আজকে আবার নতুন করে চালের দামও বেড়েছে। কিন্তু যেভাবে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ছে সেই অনুযায়ী আমাদের আয় রোজগার বাড়েনি।’

এই বিভাগের আরো খবর