শনিবার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৪   পৌষ ৭ ১৪৩১

লাইসেন্স নবায়ন ছাড়াই চালু খানপুরের ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৭ মার্চ ২০২৪  

 

# ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের দিন বন্ধ করে পালিয়ে ছিলেন এরা
# সারাদেশে দফায় দফায় অভিযান চললে ও নগরীতে ধীরগতি

 

নারায়ণগঞ্জ শহরের খানপুর এলাকার আনাচে কানাচে নোংরা পরিবেশে হুটহাট গড়ে উঠছে লাইসেন্সবিহীন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার যাদের নেই কোন বৈধ কাগজপত্র। এদের এমন কর্মকান্ডের সাথে লিপ্ত হয়ে খানপুরে দেদারসে চলছে লাইসেন্স নবায়নবিহীন অজস্র ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। অনেকে ২০০৭ সালে আবার অনেকে ২০১২ সালে ডায়াগনস্টিক সেন্টার খোলার পর থেকে তা অনেকেই তাদের লাইসেন্স আর নবায়ন করেননি।

 

সেই অনুযায়ী তারা ও লাইসেন্সবিহীন ও অবৈধ হিসেবেই বলা চলে। এই অজস্র অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর পাশেই রয়েছে সরকারি ৩শ' শয্যা হাসপাতাল যাকে ঘিরে নিয়মিত নানাভাবে নানা কৌশলে হাসপাতাল থেকে রোগী এনে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা। তা ছাড়া ও সরকারি ৩শ’ হাসপাতালের ও কিছু সহকর্মী নানাভাবে হাসপাতালে দালালির মাধ্যমে অবৈধ টাকা করে তারা ও ব্যবসার নামে অবৈধভাবেই ক্ষমতা দেখিয়ে পরিচালনা করে থাকেন ছোট ছোট ডায়াগনস্টিক সেন্টার।

 

ছোট একটি খানপুরে এই ৩শ’ শয্যা হাসপাতালের শেল্টারে গড়ে উঠেছে শত শত ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। তা ছাড়া ও এই হাসপাতালগুলোকে শহরের বুকে দেদারসে চালু রাখতে অল্প কিছু টাকা বিনিময়ে কাগজ ছাড়াই মুখে পারমিশন দিয়ে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ সিভিল সার্জন অফিসের কিছু কথিত কর্মকর্তা যাদের সহায়তায় অবৈধভাবে বহু ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দেখা মিলছে নগর জুড়েই কিন্তু যখনই কোন দূর্ঘটনা ঘটে এমতা অবস্থায় প্রকাশ্যে কেউ সঙ্গ দেয় না সেই লাইসেন্স নবায়নবিহীন হাসপাতাগুলোর।

 

সেই পরিপ্রেক্ষিতে অল্প কিছুদিন পূর্বে সিভিল সার্জনের অভিযানে সিলগালা হওয়া নারায়ণগঞ্জের খানপুরে লাইসেন্সবিহীন তিনটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার আয়েশা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মেডি এইড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ইমন ডায়াগনস্টিক সেন্টার যার নাম ও স্থান পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে আহিল ডায়াগনস্টিক সেন্টার হিসেবে। এগুলোকে সিলগালা করার ঘন্টা কয়েক পরেই তারা সিভিল সার্জনের অভিযানকে তোয়াক্কা না করেই অবৈধভাবে চালু রেখেছে মেডি এইড ও আহিল।

 

সেই অনুযায়ী দৈনিক যুগের চিন্তা টানা আহিলের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের পর গতকাল জেলা ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে বাকি নবায়ন ছাড়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর মালিকরা তাদের ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে পালিয়ে ছিলেন নবায়ন ছাড়া চলাচলকৃত মেডি এইড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, গ্যাস্ট্রোলিভ ডায়াগনস্টিক সেন্টার, খাপুরের সেন্ট্রাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ এমন খানপুরে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠা অজস্র ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো সকলকেই আতঙ্কিত দেখা গেছে।

 

এদিকে সারা দেশে অবৈধ লাইসেন্সবিহীন হাসপাতালের বিরুদ্ধে দফায় দফায় অভিযান চলছে এমনকি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ, আড়াইহাজারে চলছে নিয়মিত নানা বিষয় নিয়ে অভিযান কিন্তু শহরের নগরীতে বর্তমানে অভিযানে নিরব ভূমিকায় পালন করছে সিভিল সার্জন। যা নিয়ে লাইসেন্সকৃত হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো কৃর্তপক্ষের ক্ষোভ বাড়ছে।

 

সূত্র মতে জানা গেছে, গত (২৭ ফেব্রুয়ারি) নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. মশিউর রহমানের নেতৃত্বে শহরের খানপুরে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের একটি দল লাইসেন্সেবিহীন ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলাতে অভিযান দেন সেখানে তারা অভিযুক্ত আয়েশা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ইমন যার বর্তমান নাম আহিল ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও মেডি এইড ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে সিলগালা করে দেওয়া হয়। এর পরই আবারো এই ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো দেদারসে চালু রেখেছিলো।

 

কিন্তু পরবর্তীতে লাইসেন্সবিহীন অবৈধ আহিল ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে নিয়ে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি হয়েছিলো তার পরপরই গত (৪ ফেব্রুয়ারি) নারায়ণগঞ্জ জেলা ভোক্তা অধিকার ও জেলা প্রশাসকের ভ্রাম্যমান আদালতের একটি প্রতিনিধি দল। আহিল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান পরিচালনা করেন আর নানা অনিয়ম দেখতে পেয়ে ডায়াগনস্টিক সেন্টারটিকে বন্ধ ও মালিক রবিনকে ৭ দিনের কারাদণ্ডে দন্ডিত করা হয়েছে। কিন্তু এরই আশেপাশে ছিলো লাইসেন্স নবায়ন ছাড়া আরো কয়েকটি অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টার যাদের নামে ও রয়েছে বহু অভিযোগ।

 

লাইসেন্স নবায়ন ছাড়া দেদারসে চলছে খানপুরের মেডি এইড ডায়াগনস্টিক সেন্টার যার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজাদুল ইসলাম (আজম) তিনি ২০০৭ সালে তার প্রতিষ্ঠানটি চালু করেছেন তারপর দীর্ঘ ১২-১৩ বছরে তার লাইসেন্স আর নবায়ন করা হয়নি বলে জানা গেছে। যখনই কোন অভিযান চালু হয় তখনই এই নবায়ন ছাড়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি ডিসি অফিসের নামে অভিযোগ তোলা শুরু করে। তিনি সব সময়ই নবায়ন জমা দেওয়ার তালবাহানা দিয়ে কয়েক বছর পার করেছেন।

 

তা ছাড়া এই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নেই প্যাথলজি বিভাগের কোন ডাক্তার, রিসিপশনে যাকে বসানো হয়েছে তিনি ও ভালো একটা বুঝের লোক নয়। তা ছাড়া কোন সরঞ্জাম নেই এই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কিভাবে তাদের এখানে সিভিল সার্জন কিছু না বলে দেদারসে চলতে দিচ্ছেন এটাই প্রশ্ন সাধারণ জনমনে।

 

জানা গেছে, সর্বশেষ এই ২০২৪ সালে লাইসেন্স নবায়ন করতে দিয়েছেন তিনি কিন্তু কবে এটা নবায়ন হয়ে আসবে এটার সঠিক সময় নাই। এর আগ পর্যন্ত এটা বন্ধ রাখার কোন পারমিশন দেয়নি সিভিল সার্জন কেন দেয়নি তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। এই মেডি এইড ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি লাইসেন্স নবায়ন ফাইনাল না করে কিভাবে খোলা রাখে এমনটা নিয়ে তোলপাল চলছে খানপুরের ডায়াগনস্টিক মালিকদের মাঝে।

 

তা ছাড়া ও আরেকটি অবৈধ লাইসন্সেবিহীন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের তালিকায় রয়েছে খানপুরের গ্যাস্ট্রোলিভ ডায়াগনস্টিক সেন্টার। যা পরিচালনায় রয়েছেন ৩শ’ শয্যা হাসপাতালের অফিস সহকারি কম্পিউটার অপারেটর সোহেল রানা। যার বিরুদ্ধে রয়েছে শত শত অভিযোগ যা নিয়েই দীর্ঘদিন যাবৎই অবৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে এই গ্যাস্ট্রোলিভ ডায়াগনস্টিক সেন্টার।

 

জানা গেছে, ৩শ’ শয্যা হাসপাতাল থেকে নানাভাবে হাতিয়ে নিয়ে অপারেটর সোহেল রানা একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলে যার মাধ্যমে ৩০ লাখ টাকা দিয়ে সরকারি ৩শ’ শয্যা হাসপাতালের পাশেই গ্যাস্ট্রোলিভ ডায়াগনিস্টিক সেন্টার কিনে নিয়ে তারা চালাচ্ছেন। এদিকে এই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সাবেক পরিচালনাকারী ও বর্তমানের ডিরেক্টর মো. আল-আমিনকে সাইড সাইনে রেখে এই সোহেল সরকারি লোক হিসেবে ভয় দেখিয়ে গত ১৪ মাস পূর্বে হাতিয়ে নেয় এই ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি।

 

আরো জানা গেছে, খানপুর হাসপাতালের ডাক্তারদের জিম্মি করে রোগীদের বিভিন্ন ডিজিটাল পরীক্ষা হাসপাতালে না করে তাদের ডায়াগনিস্টিক সেন্টারে করার জন্য বাধ্য করতেন। এই পরীক্ষা গুলোর মাধ্যমে নিজেরা মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিতেন। অথচ একই পরীক্ষা সরকারি ৩শ’ শয্যা হাসপাতালে অল্প খরচে করা যায়। কিন্তু সেখানে করতে দিতেন না। এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে করোনা কালিন সময়ে এই সোহেল রানা যোগসাজস করে বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তিদের থেকে অর্থ নিয়ে তাদের বাসায় গিয়ে করোনা টিকা দিতেন। যা অনিয়মের মাঝে পরে।

 

বর্তমানে তারা ও তাদের এই ডায়াগনস্টিক অবৈধভাবেই চালু রেখেছে নেই কোন পারমিশন, নেই কোন কাগজ শুধু ৩শ’ শয্যার উপরেই ভর করে চলছে ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি। তা ছাড়া সিভিল সার্জনের তথ্য অনুযায়ী অতি শীঘ্রই ৭ সপ্তাহের মধ্যে কাগজ জমা দিতে বলা হয়েছে সিভিল সার্জন অফিসে কিন্তু তা না করেই দেদারসে চলছে এই অবৈধ ডায়াগনস্টিকটি।

 

এ বিষয়ে সোহেল রানাকে জিজ্ঞেস করলে উনি বলেন, আমি গ্যাস্ট্রোলিভের কোন মালিক না। আমকে চক্রান্ত করে এখানে মালিক বানানো হচ্ছে। তা ছাড়া এই গ্যাস্ট্রোলিভ ও এখনো নবায়ন ছাড়াই দেদারসে চলছে অভিযানের কোন দেখা নেই। সিভিল সার্জনের ৭ দিনের আল্টিমেডামে ও নবায়ন পত্র জমা হয়নি এখনো। ইতিমধ্যে নগরীতে জোরদার অভিযান চায় সাধারণ মানুষ আর তারা দেশের সব জায়াগার মতো করে নারায়ণগঞ্জ শহরে অবৈধ ও নবায়ন ছাড়া হাসপাতাল-ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো কোনটি এটি শিউর হতে চান। তা না হলে সামনে যদি কোন প্রকারের দূর্ঘটনা ঘটে এটার দায়ভার কি সিভিল সার্জন নিবে এমন প্রশ্ন অনেকের।

 

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. মশিউর রহমান বলেন, আমাদের অভিযান প্রক্রিয়াধীন অবস্থায় রয়েছে, শীঘ্রই আরেক দফায় অভিযানে শহরে প্রতিনিধি দল নামবে। এস.এ/জেসি
 

এই বিভাগের আরো খবর