বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

লেখার মধ্যে জনগণের চাহিদাকে সম্পৃক্ত করতে হবে

লতিফ রানা

প্রকাশিত: ৮ ডিসেম্বর ২০২০  

আমাদের দেশের কবি সাহিত্যিকদের লেখার মধ্যে জনগণের চাহিদাকে গুরুত্ব দিতে হবে। জনগণের আকাঙ্খা, শিল্পবোধ, জনগণের সংস্কৃতবোধসহ তাদের সাংস্কৃতিক সংগ্রামের সাথে আমরা সংযুক্ত না বিচ্ছিন্ন তার উপরই জনগণের কাছে লেখকের লেখার চাহিদা নির্ভর করবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন কবি, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক রঘু অভিজিৎ রায় এবং কবি ও সাংবাদিক কাজল কানন।

 

সোমবার (৭ ডিসেম্বর) যুগের চিন্তার সাপ্তাহিক আয়োজন ফেসবুক লাইভ টক শো ‘সাহিত্য আড্ডা’য় এধরণের অভিমত ব্যক্ত করেন এই দুই অতিথি। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সিনিয়র সাংবাদিক ও লেখক নাফিজ আশরাফ।

 

কবি, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক রঘু অভিজিৎ রায় বলেন, আমি যতটুকু না কবি তার চেয়ে বেশী আমি কবি সংগঠক। তিনি বলেন, ভিন্ন ঘরোনার মধ্য থেকে বৈচিত্রময় ভাবনাগুলোই হলো আমার কবিতা।

 

তৃতীয় বিশ্বের দেশ হিসেবে আমাদের দেশের সমমনা দেশগুলোর তরুনরা, কবি ও লেখকরা কী ভাবে, আজকের সময় সম্পর্কে, সমাজ সম্পর্কে কী ভাবে। কবিতাকে তারা কোথায় নিয়ে যেতে চায় ? মূলত সে কাজগুলো করতে গিয়েই আমি অনুবাদ করি।

 

তিনি বলেন, নেপালের কবিতা অনুবাদ করতে গিয়ে বুঝতে পারলাম নেপালের কবিরা জনগণের কাছে খুব জনপ্রিয়। তার মতে, আমাদের দেশে কবিতার  বইয়ের ৩০০ কপি বের হলে তারমধ্যে ৫০ কপিও বিক্রি হয় না। আমাদের দেশের প্রসিদ্ধ লেখকদের বইও ১০০০ কপি ছাপানো হয় না বলে উল্লেখ করেন।

 

তিনি বলেন, তাদের সাথে আমাদের জনপ্রিয়তা পার্থক্যের কারণ বিশ্লেষণ করে বুঝতে পারলাম, আমরা জনগণের আকাঙ্খা, শিল্পবোধ এবং জনগণের সংস্কৃতবোধসহ তাদের সাংস্কৃতিক সংগ্রামের সাথে আমরা সংযুক্ত না বিচ্ছিন্ন ? এই যুক্ত বিযুক্ত’র সাথে জনগণের প্রাসঙ্গিক হবে নাকি হবে না, তা নির্ভর করে।

 

তিনি বলেন, নেপালের কবিদের কবিতায় সেখানকার জনগণের চাহিদার প্রতিফলন ঘটে।

 

আমাদের লেখাগুলো বিচ্ছিন্নতা এবং সংকীর্ণতার দিকে যায়। এগুলোকে জনগণের সাথে সম্পৃক্ততা করার চাহিদা দেখে বুঝে আমাদের নিজেদের আত্মসমালোচনা করে আত্মপরিচয় তৈরী করতে হবে বলে তিনি মনে করেন।

 

এ সময় তিনি সম্পাদনার কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন ধরণের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। 

 

কবি ও সাংবাদিক কাজল কানন বলেন, লিটল ম্যাগাজিনে অপ্রতিষ্ঠানিক একটা বিষয় কাজ করে। তিনি বলেন ছোট ম্যাগাজিন বা ছোট কাগজ বলতে যা বুঝায় তা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে যেসব আন্দোলনগুলো হয়েছে তাতে যে বিষয়টা উঠে এসেছে তাতে লিটল ম্যাগাজিনে প্রতিষ্ঠান বিরোধী লেখাগুলো থাকতে হবে।

 

লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদনা করতে গিয়ে কি ধরণের বিড়ম্বনায় পড়তে হয় সে বিষয়ে তিনি বলেন, লেখা সংগ্রহ করতে গেলে তখন আর সে বিষয়টা মাথায় কাজ করে না। তিনি বলেন ধাবমান শুরু করার সময় আমাদের একটা প্রতিজ্ঞা ছিল আমরা লেখালেখি করবো, তবে আমরা দুই বছরের মধ্যে আমাদের লেখা কোথাও ছাপবো না।

 

তিনি বলেন ম্যাগাজিনের সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করা খুবই চ্যালেঞ্জের একটা বিষয়। বুক ফুলিয়ে কাজ করতে না পারলে বেশী দিন টিকে থাকা যায় না।

 

তিনি বলেন, ’৯০ দশকে যখন আমি ট্রেনে করে ঢাকা যেতাম কবিদের সাথে আড্ডা দেয়ার জন্য। তখন ট্রেন থেকে নেমে শাহবাগের আজিজ মার্কেটে পায়ে হেটে যেতাম। তখন আমাদের পকেটে তেমন টাকাও ছিল না। সেখানে বিভিন্ন জায়গার কবিরা আসতো।

 

তখনকার আজিজ মার্কেটের চিত্র এবং এখনকার চিত্র এক নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, তখন আমরা শহরমূখী হতাম একটা বাজার খোজার জন্য। আমরা কবিরা কবিতা উৎপাদন করতাম আর তার বাজার খোজার জন্য শহরমূখী হতাম।

 

তিনি বলেন, আমাদের পরের প্রজন্ম শহরে এসেই একটি চাকুরীর ব্যবস্থা জন্য তৎপর হয়। আমরা যেভাবে কবিতা নিয়ে খোড়াখুরি শুরু করতাম, এখন তেমন কোন বিষয় না। এখন ডিজিটাল মাধ্যমের কারণে পেশাগত দায়িত্বে থেকে লেখির কাজ করার বিষয় আছে।

 

এসময় তারা তাদের লেখা কবিতা আবৃত্তি করে শোনান।