শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

শামীম ওসমানের নিয়মিত অর্থ যোগানদাতা শীর্ষ পাঁচ সন্ত্রাসী

যুগের চিন্তা রিপোর্ট :

প্রকাশিত: ২১ নভেম্বর ২০২৪  

নারায়ণগঞ্জ তো বটেই দেশ-বিদেশে সন্ত্রাসের রাজনীতির জন্য গডফাদার হিসেবে কুখ্যাতি ছিল আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক সাংসদ শামীম ওসমানের। ১৯৯৬ সালের এমপি হওয়ার পর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বিস্তৃতি করেন তিনি। ২০০১ সালে বিএনপির ক্ষমতায় এলে বোরকা পড়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। পরবর্তিতে ২০০৮ সনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে তিনি ২০০৯ সনে নারায়ণগঞ্জে ফিরে আসেন। কিন্তু তখন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি ছিলেন তারই চাচী অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরী। যার জন্য শামীম ওসমান তেমন একটা সুবিধা জনক অবস্থায় ছিলেন না। 

 

তাছাড়া ২০১১ নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে শামীম ওসমান সাবেক মেয়র আইভীর কাছে পরাজীকত হন। ২০১৪ সনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে বিনা ভোটে এমপি হন শামীম ওসমান। এর পর থেকে তাকে আর পিছনে তাকাতে হয় নাই। তিনি এমপি হওয়ার পর থেকে তার সন্ত্রাসী সম্রাজ্যের আকার বাড়তে থাকে। তার পালিত সন্ত্রাসীরা  একেক জনে এক সাইড নিয়ন্ত্রণ করে নিজেদের ভাগ্যের পরির্বতনের পাশা পাশি তাদের বস শামীম ওসমানে ক নিয়মিত বড় অংকের অর্থ মাশোয়ার দিতে থাকেন।

 

এদিকে শামীম ওসমান বিগত বিশাল আকারের ওসমান সম্রাজ্যে গড়ে তোলেন। তার সন্ত্রাসী সম্রাজ্যের অন্যতম সেনাপতি হয়ে দায়িত্ব পালন করেন মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম। যিনি মুন্সিগঞ্জ ঈসাপুরা থেকে এসে নারায়ণগঞ্জে শামীম ওসমানের সন্ত্রাসী খাতায় নাম লিখিয়ে নিজের শক্ত অবস্থান তৈরী করেন। সেই সাথে গডফাদার শামীম ওসমান সম্রাজ্যের সেনাপতি হয়ে ফতুল্লা সিদ্ধিরগঞ্জে কিশোর গ্যাং, মাদককারবাড়িদের শেল্টার দিয়ে বিশাল টাকা মালিক হয়ে বিত্তশালি বনে যান। সেই সাথে ফতুল্লা ব্যবসায়ীদের থেকে নিয়মিত চাদাঁর মাশোয়ার পেতেন এই শাহ নিজাম। তাছাড়া নির্বাচনে শামীম ওসমানকে জয়ী করার জন্য প্রতিপক্ষ প্রার্থীকে অস্ত্র ধরে হুমকি দিয়ে সরিয়ে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সেই সাথে শামীম ওসমতান নির্বাচনের অর্থের যোগানের জন্য ব্যবসায়ী দিরে হুমকি দিয়ে টাকা নিতেন তিনি।

 


আরেক দিকে গণপুর্ত বিভাগ ও এলজিইডি প্রকল্পের কাজ থেকে পার্সেন্টিস খেতেন শামীম ওসমানের খালাত শ্যালক জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এহ সানুল হক নিপু। সরকারি এই অধিদপ্তর থেকে যারাই প্রকল্পের কাজ পেতেন তারা নিপুকে পার্সেন্টিস দিয়ে কাজ করতে হত। পার্সেন্টিসের টাকা ঠিকমত না দিলে তাকে কাজ করতে পদে পদে ব্ধাা পোহাতে হত। এছাড়া চাদাঁবাজিতেও পটু ছিলেন তিনি। তাছাড়া ২০১৮ সনের নির্বাচনের পরে তিনি শামীম ওসমানের পিএস হয়ে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হয়ে যান। সকল সেক্টর থেকে টাকা এনে শামীম ওসমানের বড় অংকের অর্থের যোগানদাতা হয়ে যান তিনি।
মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন সাজনু ছিলেন শামীম ওসমানের অন্যতম পালিত সন্ত্রাসী। তিনি এলজিইডি নিয়ন্ত্রণ করে সকল প্রকল্ডের কাজের টেন্ডার ভাগিয়ে নিতেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে নিম্নমানের সামগ্রী মাল দিয়ে কাজ করে প্রকল্পের কাজের পুরো টাকাই আত্মসাত করে নিত। তার দুর্নীতির মোটা অংকের টাকার ভাগ তার বস শামীম ওসমান নিয়মিত পেতেন।

 


অপরদিকে নারায়ণগঞ্জ সিদ্ধিরগঞ্জ আদমজী ইপিজেড এর জুট নিয়ন্ত্রন ও ২নং ঢাকেশ্বরী পদ্মা যমুনার তেল সেক্টর নিয়ন্ত্র করে শামীম ওসমানের মোটা অংকের অর্থের যোগানদাতা হয়ে যান মতিউর মতি। এই মতি শামীম ওসমানের আশীর্বাদ নিয়ে এলাকায় সন্ত্রাস বাহিনী তৈরী করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। সেই সাথে ওই এলাকার সন্ত্রাসীদের বস বনে যান মতি। তার বিরুদ্ধে দুদকের মামলা রয়েছে।

 


শামীম ওসমানের আরেক নামকরা সন্ত্রাসী ছিলেন সাবেক কাউন্সিলর আব্দুল করিম বাবু। তিনি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র ছিলেন। তবে শামীম ওসমানের পালিত সন্ত্রাস হয়ে সদর  বন্দরের ডিস ও ্্ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবসার নিয়ন্ত্রক হয়ে যান এই মাউড়া বাবু। এই দুই সেক্টরের নিয়ন্ত্রক হয়ে গডফাদার শামীম ওসমানকে প্রতি মাসে কোটি টাকা মাশোয়ার দিয়ে নিজেও সন্ত্রাসী ছোট খাটো সন্ত্রাস বাহিনী তৈরী করেন। তার বিরুদ্ধে ৫ আগষ্টের আগেও একাধিক চাদাঁবাজি মামলা রয়েছে। এই পাচঁ সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে গডফাদার খ্যাত সাব্কে এমপি শামীম ওসমান নিয়মিত মোটা অংকের পরিমান অর্থ পেতেন। যা ৫ আগষ্টের পরে তছনছ হয়ে যায়। নির্বাচনের সময় তার  অর্থের জন্য ব্যবসায়ীদের হুমকি ধমকি দিয়ে চাদাঁ আদায় করতেন তার পিএস এহসানুল হক নিপু ডান খ্যাত পরিচিত মুন্সিগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা সন্ত্রাসী শাহ নিজাম।

 


শামীম ওসমানকে ইঙ্গিত করে সম্প্রতি সময়ে সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘স্বৈরাচারী সরকারের এক সন্ত্রাসী গডফাদার ছিল। সে খেলা হবে, খেলা হবে বলে অনেক হুংকার দিয়েছিল। আজ সে পলাতক। বোরকা পরে পালিয়েছে। ওয়ান ইলেভেনের সময় আমরা আইনের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলাম, তখনও সে বোরকা পরে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যায়। আওয়ামী লীগ শামীম ওসমানকে সন্ত্রাসী হিসেবে জানত বলে তাকে দলের কোনো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বসায় নাই। তার সভায় চাঁদাবাজ-দখলবাজরা যেত। তার সন্ত্রাসী বাহিনীর ভয়ে মানুষ কোনো প্রতিবাদ করতে পারে নাই।

এই বিভাগের আরো খবর