শনিবার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৪   পৌষ ৭ ১৪৩১

শামীম ওসমানের ব্যবসায়িক পার্টনার টগর লাপাত্তা

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২৬ আগস্ট ২০২৪  

 

 

শেখ হাসিনা সরকারের আকস্মিক পতনের পর ফের সপরিবারে বিদেশে পালিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক এমপি একেএম শামীম ওসমান। এর আগে ২০০১ সালে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে চার দলীয় জোট সরকার ক্ষমতা নেয়ার কয়েকদিন আগেই গড ফাদারের তকমাধারী শামীম ওসমান বোরকা পরে দেশ ছেড়ে পালিয়েছিলেন। কিন্তু এবার তার পরনে বোরকা ছিলো কিনা কিংবা কিভাবে পালিয়েছেন, তা এখনো জানা যায়নি। তবে জানা গেছে,  তার দেশ ত্যাগ করার খবর নিশ্চিত হওয়ার পর তার অনেক বিশ্বস্ত সহচরও দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন অথবা নিরাপদ আশ্রয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন।

 

এমনি একজন হলেন আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সস্তাপুর এলাকার মাহবুবুল হক টগর। জনরোষের ভয়ে তিনি এখন এলাকাছাড়া। তার পিতা ছিলেন সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের একজন সাধারণ কর্মচারি। তাদের পৈত্রিক বাড়ি টাঙ্গাইলে। টগর ছিলেন শামীম ওসমানের খুবই বিশ্বাসভাজন একজন ব্যবসায়িক পার্টনার। শামীম ওসমান তাকে নারায়ণগঞ্জ জেলখানার খাবার সাপ্লাাইয়ের ঠিকাদারি ব্যবসাটা এককভাবে করতে দিয়েছিলেন। এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে তিনি খাবারের পাশাপাশি নানারকম মাদকও জেলখানায় পাচার করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়াও সস্তাপুর এলাকার জমি ভরাট, জমি দখল, ডিশ-ইন্টারনেট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ এবং চাঁদাবাজি করে রাতারাতি কোটিপতি বনে যান তিনি।

 

এসব আকাম-কুকাম করে তিনি এ পর্যন্ত যত টাকা কামিয়েছেন, তা তার তিন পুরুষ ঠ্যাংয়ের উপর ঠ্যাং তুলে বসে বসে খেলেও ফুরাবে না বলে জানান এলাকাবাসী। তার আয়ের একটি অংশ তার ব্যবসায়িক পার্টনার শামীম ওসমান এবং তার চেলাপেলাদের পকেটে তুলে দিয়ে তাদেরকে হাতে রাখতেন যাতে তিনি বিপদে পড়লে তারা তার পাশে এসে দাঁড়ায়। তিনি থাকতেন বিলাসবহুল বাসায়, চড়তেন দামি গাড়ি। সস্তাপুরের একক নিয়ন্ত্রক ছিলেন টগর। তার হুকুম ছাড়া এলাকার গাছের পাতাও নড়তো না বলে জানান অনেক বাড়িওয়ালা। 

 

বড় ভাইয়ের দাপটে তার ছোট ভাইয়েরাও সস্তাপুর দাবড়িয়ে বেড়াতো বলে শোনা যায়। ১৯৯৬ সলে যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে, তখন থেকেই তিনি শামীম ওসমানের প্রিয়ভাজন হয়ে যান। আর তখন থেকেই তিনি শামীম ওসমানের নাম বিক্রি করে নানা অপকর্মে লিপ্ত হয়ে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনতে থাকেন। ওই সময় তার বিভিন্ন অপকর্মের ফিরিস্তি স্থানীয় পত্রিকায় ছাপা হতে থাকে।

 

জানা যায়, ২০০১ সলে চার দলীয় জোট সরকার ক্ষমতা নেয়ার পর পরই টগর আত্মগোপন করেন। তবে গোপনে গোপনে অনেকের হাতেপায়ে ধরে, প্রচুর টাকা বিলিয়ে এলাকায় ফিরে আসেন। জোট সরকারের পাঁচ বছর গো-বেচারার মতো অভিনয় করে কাটিয়ে দিলেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর পরই টগর স্বমূর্তি ধারণ করেন। কিছু ব্যক্তি পেছনে থাকায় এবার আগের চাইতেও বেশী মারমুখি হয়ে যান। জমিতে সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে মালিকানা দাবি করে প্রকৃত মালিকের কাছ থেকে টাকা আদায় করতেন। 

 

সস্তাপুর এবং আশপাশের এলাকার জমি ভরাটের কাজ তিনি এককভাবে করতেন। টাকার বিনিময়ে এলাকার বিচার করতেন বলেও ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। ভাইদের নিয়ে ইট, বালু, সিমেন্ট ও রডের ব্যবসা এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করতেন। এলাকায় বাড়ি করতে গেলে তার গড়া সিন্ডিকেটের কাছ থেকেই নির্মাণসামগ্রী চড়াদামে কিনতে বাধ্য হতেন বাড়িওয়ালারা। সূত্র জানিয়েছে, এলাকার নিয়ন্ত্রণ অক্ষত রাখতে ইসদাইর শস্তাপুরের আলোচিত জামান-শিমুলের মত কিশোরগ্যাং লিডার মাদক ব্যবসায়ীদের শেল্টার দিতেন টগর। 

 

তাদের মাধ্যমে বিভিন্ন ভাবে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে নিজের ফয়দা লুটতেন। একটা সময় জামান-শিমুলের সাথে বিরোধ হলে এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে সে সংঘর্ষে টগরের ভাই ও তার বড় ছেলেও লিপ্ত হয়। এভাবে জামান-শিমুলের সাথে তার বিরোধ হয়ে গেলে এলাকায় প্রভাবকে সমন্বত রাখতে নারায়ণগঞ্জের গডফাদার শামীম ওসমানের শ্যালক তানভীর আহমেদ টিটুর সাথে হাত মিলিয়ে ফের এলাকায় প্রভাব বিস্তার করা শুরু করে দেন। এমনকি টিটু নারায়ণগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় টগরও বিভিন্ন মহলে দাবি করতে থাকেন জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাথে তিনি সম্পৃক্ত। কিন্তু গত ৫ আগস্ট আওয়ামীলীগ ক্ষমতাচ্যুত হলে টিটু। 

 

পাঁচ আগস্টের পর থেকে টগরকে সস্তাপুর এলাকায় দেখা যাচ্ছে না। তাকে দেখত না পেয়ে এলাকাবাসীর মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে বলে জানা যায়। টগর  এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছেন বলেই ধারণা করা হচ্ছে। জেলা বিএনপির এক নেতা বলছেন, যাদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পাওয়া যাবে,  সেই সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে। শীঘ্রই পলাতকদের বিরুদ্ধে মামলা করে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী বিচারের সম্মুখিন করা হবে।  

এই বিভাগের আরো খবর