Logo
Logo
×

নগর জুড়ে

শামীমের শেল্টারে বিসিক ঝিনুক হাউজে দেহব্যবসা

Icon

অর্ণব হাসান

প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২২, ০৬:২৯ পিএম

শামীমের শেল্টারে বিসিক ঝিনুক হাউজে দেহব্যবসা


# ঘন্টায় দুই হাজার টাকা : ম্যানেজার

# পুলিশ সদস্যদেরও আনাগোনা রয়েছে

#  দেহব্যবসার সাথে মাদককারবারও চলে: এলাকাবাসী
 

নারায়ণগঞ্জের নাম করা টানবাজার পতিতালয় ১৯৯৯ সালে জুলাই মাসে সাধারণ জনগণ ও প্রশাসন মিলে শেষ রাতে যৌনকর্মীদের ওপর অভিযান পরিচালনা করে উচ্ছেদ করে দেয়া হয়। বিভিন্ন সভা সমাবেশে নারায়ণগ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমান তার বক্তব্যে বলেন ৯৬ এর নির্বাচনে সংসদ সদস্য হওয়ার পর টানবাজার পতিতালয় উচ্ছেদ করেন; সেই অনুযায়ী করেছেনও।

 

 

তবে নগরবাসীর মতে টান বাজার পতিতালয় উচ্ছেদ হলেও শহর ও তার আশপাশের এলাকার পাড়া মহল্লায় মিনি পতিতালয় গড়ে উঠেছে। যেগুলোর বিরুদ্ধে তেমন একটা ব্যবস্থাও নেয়া হয় না। আবার কিছু ক্ষেত্রে প্রশাসন জানলেও; কোনোে এক অজ্ঞাত কারণে, এ বিষয়ে নীরবতা পালন করে থাকেন। অভিযোগ রয়েছে, তারাও সেখান থেকে মাসাহোরা পেয়ে থাকেন।   

 

 

এবার যুগের চিন্তার অনুসন্ধানে খোঁজ মিলেছে ফতুল্লার বিসিক শিল্প এলাকার ১ নম্বর গেটের উত্তর পাশে ঝিনুক গেষ্ট হাউসে মেয়েদের দিয়ে দেহ ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে দীর্ঘদিন যাবত একটি চক্র। ঝিনুক গেষ্ট হাউস নামক দেহ ব্যবসার পতিতালয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তিন মাস আগে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসে অভিযোগ প্রদান করেন এলাকাবাসী। দেহ ব্যবসা চালানো গেষ্ট হাউসের মালিক শামীম তালুকদার।

 

 

এই পতিতালয়ের ম্যানেজার হিসেবে আছেন বিল্লাল হোসেন। অভিযোগ রয়েছে, এই শামীম তালুকদার প্রভাব বিস্তার করে তিনি এখানে ৫ বছর যাবত ঝিনুক গেষ্ট হাউসে অসহায় মেয়েদের দিয়ে জোরপূর্বক ভাবে দেহ ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। এই শামীম তালুকদার; কথিত এক ফটো সাংবাদিকের ভায়রা ভাই হিসাবে পরিচয় দিয়ে থাকে বলে জানান স্থানীয়রা।

 

 

তাছাড়া ম্যানেজার জানান ফতুল্লার কয়েকজন পুলিশ সদস্যের আনাগোনা রয়েছে। আবার এখান থেকে কয়েকজন টাকাও নিয়ে যান। এসময় সাংবাদিকরা ঝিনুক গেষ্ট হাউসে প্রবেশ করলে; এখানকার ম্যানেজার বিল্লাল বাধা প্রদান করেন। বিশেষ পেশার কয়েকন ব্যক্তিকে দৈনিক হিসেবে টাকা দেন বলে জানান তিনি। এমনকি অর্থ প্রলোভনে মেয়েদের এখানে এনে তাদেরকে যৌন কর্মী হিসেবে কাজ করানো হয়।

 

 

স্থানীয়রা জানান, ঝিনুক গেষ্ট হাউসে দ্বিতীয় তলা এবং তৃতীয় তলা মিলে প্রায় ২০ টি রুম রয়েছে। প্রতিটি রুমের চাবি টানিয়ে রাখা হয়। এখানে ঘন্টা প্রতি রুম ভাড়া দেয়া হয় ১ হাজার থেকে শুরু করে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত। আবার অনেক ক্ষেত্রে বড় ব্যবসায়ী দেখলে তার কাছ থেকে ব্লাকমেইল করে তাকে নিঃস্ব করে ছেড়ে দেয়া হয়। এতে করে কেউ লজ্জা, শরমে মুখ খোলার সাহস পর্যন্ত পান না।

 

 

জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ দেয়া সূত্রে জানা যায়,  ঝিনুক গেষ্ট হাউজের নামে পতিতালয়, মাদকসেবন ও সন্ত্রাসীদের আস্তানা উচ্ছেদের জন্য আবেদন জানিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয় অভিযোগ দেয়া হয়। অভিযোগে উল্লেখ্য করা হয় শাসনগাঁও এলাকার বিসিক শিল্প নগরীর ১ নম্বর গেইট সংলগ্ন ঝিনুক গেষ্ট হাউস নামক ভবনে দীর্ঘ দিন যাবত দেহ ব্যবসা, মাদক সেবন, মাদক কেনা বেচাসহ সন্ত্রাসীদের আশ্রয়স্থল হিসাবে গড়ে উঠেছে ঝিনুক গেষ্ট হাউস।

 

 

অভিযোগে বলা হয়, দেহ ব্যবসা একটা মেয়ের জন্য এত বড় অসম্মানের পেশা আর হতে পারে না। কিছু দূর্ধর্ষ সন্ত্রাসী গায়ের জোরে গার্মেন্টস কর্মীৎসহ নানা বয়সী ও নানা পেশার মেয়েদেরকে এই গেষ্ট হাউজে দেহ ব্যবসায় বাধ্য করছে। সীমাহীন দারিদ্রতার কারণে একজন নারীর আত্মমর্যাদাবোধকে বাধ্য হয়ে জলাঞ্জলি দিয়ে জীবন বাঁচানোর তাগিদে সন্ত্রাসীদের হুমকির মুখে নিজের সর্বস্ব বিলিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে।

 

 

তাছাড়া দেহ ব্যবসার পাশাপাশি ঝিনুক গেষ্ট হাউজে মাদকের রমরমা ব্যবসা পরিচালিত হচ্ছে। মাদক বিক্রি, মাদক সেবন, সন্ত্রাসীদের নানা অপ-কর্মের নীলনকশা ঝিনুক গেষ্ট হাউজেই সম্পন্ন হয়। এই অপকর্মের মাধ্যমে সমাজকে প্রায় পরিপূর্ণভাবে কলুষিত করে ফেলছে।

 

 

সমাজ বিশেষজ্ঞাদের মতে, দেহ ব্যবসা, মাদক বেচা-কেনা, মাদক সেবন ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের শুরুটাই হয় অসহিষ্ণুতা, হীনমন্যতা, ভারসাম্যহীন প্রেরণা এবং নষ্ট ইল্যুশন এর কারণে। এই নষ্ট মাইন্ডসেট, উদ্ধত চিন্তা-চেতনা, সন্ত্রাসীদের মনোজগতে এমন ক্রোধ ও উদ্ধত্যপূর্ণ ইচ্ছা সৃষ্টি করে, যা তাকে টেনে নেয় হত্যা ও ধ্বংসের মত মহাপাপযজ্ঞে।

 

 

এই নষ্ট কর্মের মধ্য দিয়ে নিজেদের ক্ষমতা বিস্তার করার পরিবেশ তৈরির ইচ্ছাপূরণের পৃষ্ঠপোষক ও অভয়রাণ্য হচ্ছে ঝিনুক গেষ্ট হাউজের মত নারকীয় স্থানগুলি। এসব স্থান থেকেই যেসব কর্মকান্ডের গোড়াপত্তণ হয় তা ব্যক্তি, গোষ্ঠী, সমাজ ও রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করে তোলে। এসব কর্মকান্ডের ফলে সমাজ ও জাতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। শামীম তালুকদারের শেল্টারেই এই সকল অপকর্ম হয় বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

 

 

তাই বিশাল পতিতালয়টি উচ্ছেদের জন্য আবেদন জানান এলাকাবাসী। এর আগেও যেভাবে টানবাজার পতিতালয় উচ্ছেদ করা হয়েছিল, একই ভাবে পুলিশ প্রশাসনসহ সকলের সহযোগিতায় ঝিনুক গেষ্ট হাউস নামক দেহ বব্যসার আড্ডাখানা উচ্ছেদ করা সম্ভব। এতে করে ঝিনুক গেষ্ট হাউজের মতো সমাজের কলঙ্ক মোছা সম্ভব।

 

 

এবিষয়ে শামীম তালুকদারের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে, তিনি ফোনকল রিসিভ করেন নাই। ঝিনুক গেষ্ট হাউসে গেলে সাংবাদিক টের পেয়ে তিনি পালিয়ে যান।

 

 

জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেলের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোনকল রিসিভ করেননি। এন.এইচ/জেসি

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন