শুক্রবার   ১৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১ ১৪৩১

শিশু আলিফকে নির্যাতনের পর হত্যা, লাশ বুকে নিয়ে মর্গে বাবা

প্রকাশিত: ১৬ আগস্ট ২০১৮  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : নগীরর জল্লারপাড়ে শিশু শিহাব উদ্দিন আলিফকে অমানুষিক নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৬ আগষ্ট) সকাল ১১টার দিকে আলিফ নিখোঁজ হয়।  নিখোঁজের ছয় ঘন্টা পর বিকেল পাঁচটার দিকে পুলিশ আলিফের লাশ উদ্ধার করে প্রতিবেশী আলী খোকনের বাড়ির নীচতলার ভাড়াটের তালাবদ্ধ রুম থেকে।

নিহত আলিফের দুই হাত বাঁধা ও মুখে রুমাল গুঁজে দেয়া ছিলো। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতেরও চিহ্ন রয়েছে বলে পুলিশ জানায়। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ এক যুবককে আটক করেছে। নিহত আলিফ জল্লারপাড় আমহাট্টা এলাকার সৌদি প্রবাসী আলমগীরের ছেলে। 

চার ভাই-বোনের মধ্যে নিহত আলিফ ছিল সবার ছোট এবং এলাকাবসীর খুব আদরের। আলিফের বাবা আলমগীর সংসারের আয় রোজগারের জন্য গত পনের বছর যাবত সৌদি আরবে প্রবাস জীবন যাপন করছেন। প্রতি বছর দেশে আসেন। এবারের ঈদ উপলক্ষে গতকাল (বুধবার) দেশে এসেছেন তিনি। 

 

আদরের ছেলের লাশ বুকে নিয়ে প্রায় উন্মাদের মতো হয়ে পড়েন বাবা আলমগীর। কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি। ছেলেকে কিছুতেই বুক ছাড়া করতে চাইছিলেন না। 

এদিকে সদর মডেল থানার পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আলিফের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের মর্গে পাঠাতে চাইলে তিনি কোন কিছুতেই ছেলের নিথর দেহকে পুলিশে কাছে দিতে রাজি হননি। এ সময় তার উম্মাদনায় আর্ত চিৎকারে আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠে। পুরো এলাকায় নেমে আসে শোকের স্তব্দতা। উপস্তিত সকলেই বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। 

এক পর্যায়ে সকলের অবুঝ সান্তনায় ছেলের লাশ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করতে রাজি হলেও তিনি নিজেই ছেলের লাশ বুকে করে মর্গে নিয়ে দিয়ে আসেন।  

আলিফের বাবা আলমগীরের দাবী, আলী খোকনের দুই ভাড়াটে রিপন ও অহিদুল নামের দুই যুবকই তার ছেলেকে হত্যা করেছে। যেহেতু তাদের ঘর থেকেই আলিফের বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার হয়েছে। তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে ছেলের হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু বিচার দাবী করেন।

নিহত আলিফের স্বজনরা ও এলাকাবাসী জানান, বৃহস্পতিবার বেলা এগারোটার দিকে বাড়ির সামনে উঠোনে খেলা করছিল আলিফ। ওই সময় থেকেই সে নিখোঁজ হয়। পরিবারের সদস্যরা ও এলাকাবাসী মিলে আশেপাশের বাড়িঘর ও পাড়া মহল্লায় খোঁজাখুঁজি করলেও আলিফের কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি।

বিকেল পাঁচটার দিকে প্রতিবেশী আলী খোকনের বাড়ির নীচতলার ভাড়াটের তালাবদ্ধ রুম থেকে এলাকাবাসী বস্তাবন্দি অবস্থায় উদ্ধার করে আলিফের লাশ। এসময় আলিফের দুই হাত বাঁধা ও মুখে রুমাল গুঁজে দেয়া ছিল। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতেরও চিহ্ন রয়েছে। 

এলাকাবাসী আরো জানান, গত এক মাস আগে রিপন ও অহিদুল নামে দুই যুবক রাজমিস্ত্রীর পরিচয় দিয়ে আলমগীরের প্রতিবেশী আলী খোকনের বাড়ির নীচতলার একটি রুম ভাড়া নেয়। তাদের রুমের তালা ভেঙ্গেই আলিফের লাশটি উদ্ধার করা হয়েছে। 

এ ঘটনায় পুলিশ রিপনকে আটক করলেও অহিদুল পলাতক রয়েছে এবং মামলা না করতে মোবাইল ফোনে নিহত আলিফের পরিবারের স্বজনদের নানাভাবে হুমকি প্রদান করছে। 

নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কামরুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় রিপন নামের এক যুবককে আটক করা হয়েছে। তবে তার রুমমেট ও সহকর্মী অহিদুলকে গ্রেফতার করতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে। কারা কি কারনে এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে তা তদন্তের পর জানা যাবে। এ ব্যাপারে তদন্তসহ মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান তিনি।
 

এই বিভাগের আরো খবর