বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

সব আ.লীগ নেতাই ফেল

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৩১ জুলাই ২০২৪  

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিতে সহিসংতার রূপ নিলে নারায়ণগঞ্জ শহরের ২নং রেল গেইট এলাকায় অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর কার্যালয়ে ব্যাপক তাণ্ডব চালায় নাশকতাকারীরা। অপরদিকে পার্টি অফিসের সন্নিকটেই অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করর্পোরশন নির্মিত মিনি পার্কে বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের ম্যুরালটি ভেঙ্গে মাটিতে ফেলে আগুন দেয় নাশকতাকারীরা। অথচ, এই দুটি স্থাপনাই আওয়ামীলীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এলাকা দেওভোগে অবস্থিত। এমনকি দেওভাগ এলাকাই জেলা এবং মহানগরের শীর্ষ নেতাদের বাসস্থান। এছাড়াও বছরজুড়েই নারায়ণগঞ্জের আওয়ামীলীগের পার্টি অফিসের আশে পাশেই নেতাকর্মীদের আনাগোনা থাকে। তারপরও ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিতে সহিসংতার রূপ নিলে পার্টি অফিসে তাণ্ডব বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভেঙ্গে আগুন দিলে কোন প্রকার প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি জেলা এবং মহানগরের শীর্ষ নেতারা। কিন্তু এই পার্টি অফিস থেকেই এক সময় হুক্কার বা বড় গলায় দেওভোগের আওয়ামীলীগের নেতারা দাবি করতেন দেওভোগ আওয়ামীলীগের ঘাঁটি এই দেওভোগের নেতাকর্মীদের কাছেই আওয়ামীলীগ নিরাপদ। তবে এই দেওভোগ এলাকার মধ্যেই যে আওয়ামীলীগের দৈন্যদশা লুকিয়ে ছিল সেটাই স্পষ্ট হয়েছে এই তাণ্ডবের মধ্যে দিয়ে। এছাড়া তাণ্ডবে জাতির পিতার ম্যুরাল ভেঙ্গে আগুন দিলেও গা শিউড়েনি আওয়ামীলীগ নেতাদের এমনকি কোন প্রতিবাদী কর্মকান্ড দায়িত্বশীল নেতাদের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়নি এমনকি অনেক নেতারা দায় এড়াচ্ছেন সিটি করপোরেশন স্বায়ত্ব শাসিত প্রতিষ্ঠান তাদের উদ্যেগেই এই বিষয়ে আইনী পদক্ষেপ ও ম্যুরাল পুনঃস্থাপন হবে।


সূত্র বলছে, নারায়ণগঞ্জ জেলা এবং মহানগর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক দুর্বলতা ভয়ঙ্করভাবে ফুটে উঠেছে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিতে সহিসংতার সময়। এই সহিসংতার সময় নারায়ণগঞ্জে আওয়ামীলীগের উপর যে তাণ্ডবগুলো পরিচালিত হয়েছে যেমন: নারায়ণগঞ্জ শহরের ২নং রেল গেইট এলাকায় অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর কার্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভেঙ্গে আগুন হিসেবে নারায়ণগঞ্জ জেলা বা মহানগর আওয়ামীলীগ নেতাদের ঘরের দুয়ারেই সংগঠিত হয়েছে। কেননা জেলা এবং মহানগরের অধিকাংশ নেতাদের বাসস্থান এবং কর্মস্থল এর আশেপাশেই। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাই এবং সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো: শহীদ বাদল এবং নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা তাদের নেতৃত্বে বা তাদের নির্দেশনায় এই সহিসংতার প্রতিরোধ দূরথাক প্রতিবাদও করতে পারেনি। অথচ, এই সহিসংতা দেশজুড়ে থেমে গেলে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগরের নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙা দেখতে উকি ঝুঁকি দিতে দেখা যায় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের। কিন্তু এখনো তাদের টনক নড়ছে না জেলা এবং মহানগরের নেতাদের আওয়ামীলীগের ক্ষমতাকালীন সময়েই তাদের পার্টি অফিস ভাঙচুর এবং জাতির পিতার বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভেঙ্গে আগুন এর প্রতিবাদেও তাদের বিবেক জাগ্রত হচ্ছে না এমনটাই তীর ছুড়ছেন দায়িত্বপ্রাপ্তদের প্রতি তৃণমূলের। কিন্তু জেলা এবং মহানগরের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের মধ্যে অনেকেই বলছেন দলীয় কার্যালয়ে হামলার বিষয়ে আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভেঙ্গে আগুন এই বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের মধ্যে অনেকেই বলছে আমরা দলীয় পর্যায়ে বিষয়টি অবহিত করছি। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙ্গায় আমাদের আইনী পদক্ষেপ নেয়ার সুযোগ নেই। কেননা এই পার্কটি সিটি করপোরেশন স্বায়ত্ব শাসিত প্রতিষ্ঠানের। কিন্তু ভাঙ্গা এবং আগুন দেয়ার প্রতিবাদে কোন কিছুই বলছে না। তবে এসকল জেলা এবং মহানগর আওয়ামীলীগের নেতারাই বছরজুড়ে দলীয় পদ পদবী সম্মেলনকে ঘিরে খুবই সচেতন সক্রিয় থাকেন। কোন প্রকার কমিটি হলে পাল্টা কমিটি প্রতিবাদ বিদ্রোহমূলক আচরণ পার্টি অফিসে তালা এর কোনটিই করতে ভুলেন না। যেমন: নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাই এবং সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো: শহীদ বাদল সম্মেলনের মাধ্যমে পুনরায় নেতৃত্বে ফিরলেও কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে গিয়ে পৃথক পৃথক দুটি প্রস্তাবিত কমিটি কেন্দ্রে জমা দেন।

 

 তাদের প্রস্তাবিত কমিটি নিয়েও বিতর্ক থাকায় এখনো কমিটি অনুমোদন হয়নি। অপরদিকে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা ওয়ার্ড কমিটি করতে গিয়ে নিজেদের মধ্যেই বিভাজন সৃষ্ট করেন আবার সেই বিভাজন থেকে ঐক্যে এসে কমিটি গঠন করে বিতর্কে পড়েন। কেননা কমিটিতে অযোগ্য রাজাকার পরিবারের লোক পদায়িত হয়েছে এগুলো নিয়ে প্রশ্ন তুলে সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদককে আবাঞ্চিত ঘোষণা করে পাল্টা কমিটি হুশায়ারী পাল্টা পাল্টি বক্তব্যে লিপ্ত হয়ে পড়েন নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জি এম আরাফাত। তাদের এই পাল্টাপাল্টি বক্তব্য একজন আরেকজনকে দেখা নেয়ার মত আচরণ ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্ট করেন পুরো নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গনে। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিতে সহিসংতার সময়ে দলীয় সংকটময় সময়ে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জি এম আরাফাতের এলাকায় অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ জেলা এবং মহানগর আওয়ামীলীগের কার্যালয় এবং পার্টি অফিসের সন্নিকটেই অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করর্পোরশন নির্মিত মিনি পার্কে বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভেঙ্গে আগুন এবং পার্টি অফিসে ব্যাপক তাণ্ডব চালানো হলে প্রতিরোধে নেতাকর্মীদের নিয়ে অবস্থান নেননি এবং পরবর্তীতে প্রতিবাদমূলক কোন প্রকার কর্মকান্ড করেননি। পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাই এবং সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো: শহীদ বাদলও এই তাণ্ডব চালানো হলে প্রতিরোধ করতে নেতাকর্মীদের নিয়ে অবস্থান নেননি এবং পরবর্তীতে প্রতিবাদমূলক কোন প্রকার কর্মকান্ড করেননি জেলা আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে শুধুমাত্র তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রাস্ত স্থাপনা দেখতে উকি ঝুকি দিয়ে দায় এড়িয়েছেন।      

  
জেলা ও মহানগর কার্যালয়ে ভাঙচুর ও বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙ্গার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাই যুগের চিন্তাকে বলেন, আমরা নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে পার্টি অফিস ভাঙচুরের জন্য মামলার পদক্ষেপ নিচ্ছি। তবে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙ্গার বিষয়ে আমরা কোন প্রকার ব্যবস্থা নিচ্ছি না এটা সিটি করপোরেশনের ব্যাপার। তবে এসকল বিষয় বস্তুর প্রতিবাদে আপাতত মামলার বিষয়ে আমরা কাজ করছি।


জেলা ও মহানগর কার্যালয়ে ভাঙচুর ও বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙ্গার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো: শহীদ বাদলের সাথে ফোনে একাধিকবার সংযোগ স্থাপন করার চেষ্টা করলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।  


জেলা ও মহানগর কার্যালয়ে ভাঙচুর ও বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙ্গার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের সাথে ফোনে একাধিকবার সংযোগ স্থাপন করার চেষ্টা করলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।  


জেলা ও মহানগর কার্যালয়ে ভাঙচুর ও বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙ্গার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা যুগের চিন্তাকে বলেন, আমাদের পার্টি অফিসে ভাঙচুর করেছে নাশকতাকারীরা আমরা এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সদর থানায় কথা বলেছি। এছাড়াও  আমরা নাশকতাকারীদের চিহ্নিত করতে কাজ করছি এমনকি তাদের পরিচয় সনাক্তে বিভিন্ন মহলের থেকে সহযোগীতা চেয়েছি।  বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙ্গার বিষয়ে বলেন, সিটি করপোরেশন স্বায়ত্ব শাসিত প্রতিষ্ঠান আর এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই ম্যুরালটি নির্মিত এখানে মামলা করলেও এটা সিটি করপোরশেন করবে। কিন্তু এই বিষয়টি নিয়ে আমরা পার্টির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের অবহিত করেছি। পার্টির পক্ষ থেকে একটি বিশেষ টিম এসে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙ্গাটি পরিদর্শন করে গিয়েছেন। কিন্তু সকল বিষয় নিয়ে কোন প্রকার প্রতিবাদ করার বার্তা দেননি।


জেলা ও মহানগর কার্যালয়ে ভাঙচুর ও বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙ্গার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জি এম আরাফাত যুগের চিন্তাকে বলেন, ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।


নারায়ণগঞ্জের ক্ষেত্রেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল যেই মন্তব্য করেছেন সেটি যথার্থই বটে।  কোটা আন্দোলনকে ঘিরে রংপুরে নারকীয় তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘আপনারা ফেল (ব্যর্থ) করেছেন। ওরা এসে অফিসে হামলা করলো, আগুন ধরিয়ে দিল আর আপনারা পকেটে হাত দিয়ে চেয়ে চেয়ে দেখলেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে ওরা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে ঢুকে মেরে ফেলবে। এখনই সাবধান হয়ে যান। দলের মধ্যে দুর্বলতাগুলো দূর করেন।’
 

এই বিভাগের আরো খবর