শনিবার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৪   পৌষ ৭ ১৪৩১

সরকারের বেঁধে দেয়া দামে বিক্রি হচ্ছে না ডিম-মুরগি

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৪ অক্টোবর ২০২৪  


সরকার ডিম ও মুরগির দাম বেঁধে দিলেও তা মানছে না নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীরা। মুরগির ডিম হালিতে ৫৫ টাকা ও ব্রয়লার মুরগি ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজার করতে এসে দাম শুনেই ফুসে উঠছেন ক্রেতারা। গত ১৫ সেপ্টেম্বর খুচরা পর্যায়ে মুরগির লাল ডিম খুচরা পর্যায়ে ১১ টাকা ৮৭ পয়সা, সোনালি মুরগি প্রতি কেজি ২৬৯ টাকা ৬৪ পয়সা এবং ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা নির্ধারণ করে দিয়েছিল সরকার।

 

 

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে এ উদ্যোগ নেয়া হয় যেখানে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তদর এবং পোলট্রি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের নেতাদের সমন্বয়ে এ মূল্য বাস্তবায়নে জয়েন্ট ওয়ার্ক থাকবে।

 


কিন্তু এ সিদ্ধান্তের ১৮ দিন পেরিয়ে গেলেও নারায়ণগঞ্জের বাজারে মুরগির ডিম ও ব্রয়লার মুরগি বেশি দামেই বিক্রি হচ্ছে। মুরগির লাল ডিম প্রতি ১১ টাকা ৮৭ পয়সা (১২ টাকা) এর জায়গায় পিছ ১৩ টাকা ৭৫ পয়সায় বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা (১৮০ টাকা) এর জায়গায় ২০০ থেকে ২০৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গতকাল বুধবার (৩ অক্টোবর) নগরীর দ্বিগু বাবুর বাজার ঘুরে এ তথ্য পাওয়া যায়।

 

 

বাজারে মুরগির ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ২০০-২১০ টাকা, সোনালী মুরগি ২৬০-২৭০ টাকা, কক্ মুরগি ২৬০ টাকা, লেয়ার লাল মুরগি ৩২০ টাকা, প্যারেন্ট খাসি মুরগি ৩২০ টাকা, প্যারেন্ট খাসি মোরগ ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সেই সাথে খুচরা পর্যায়ে মুরগির লাল ডিম হালিতে ৫৫ টাকা, সাদা ডিম ৫৪ টাকা, হাশের ডিম ৬৬ টাকা ও কোয়েল ১৪ টাকা হালিতে বিক্রি হচ্ছে।

 


বাজার করতে আসা সাব্বির বলেন, টেলিভিশনে দেখেছি মুরগি আর ডিমের দাম নির্ধারণ করেছে সরকার। মানুষের মুখে মুখেও শুনেছি কিন্তু বাজারে এসে তার বাস্তবায়ন হতে দেখি নাই। ডিম হালিতে এখন ৫৪ টাকা রাখা হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগি এখন কেজিতে ২০০ টাকা। এর জন্য প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষের দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। নয়তো খেটে খাওয়া মানুষ বাঁচতে পারবে না।

 


অপর এক ক্রেতা শাবনূর বলেন, বাবা, আমাগো মুরগি কিনা হয় না। ডিম যাও কিনি, আজকা দেহি ডিমের মেলা দাম। তাই ডিম কিনি নাই আজকা। সবজি দিয়া চলন লাগবো। কি করমু কও বাবা, যে জিনিসে হাত দিই হেই জিনিসের অনেক দাম।

 


মুরগি বিক্রেতা মনির হোসেন বলেন, ঢাকা আর ঢাকার বাইরে থেকে কয়েকজন খামারি থেকে মুরগি আনি। কয় দিন আগেই ব্রয়লার মুরগি ১৯০ টাকা রেটে আনছি। আনেত খরচও পড়ছে। এই হিসাব মিলাইয়া ২০৫ টাকায় বিক্রি করতাছি। খামারিরা আমাদের যে দামে মুরগি দেয় তা বুঝেই বিক্রি করি।

 


ডিম বিক্রেতা আশরাফ আলি বলেন, সরকার যে দাম দিছে তা আমিও জানি। কিন্তু খামারি আর সাপ্লাইয়ার তো দাম কমায় নাই। তারা যে দাম রাখছে, সেইটাই বুইঝা খুচরা বিক্রি করি।

 


এদিকে, নারায়ণগঞ্জে ডিম ও মুরগির মূল্য নিয়ন্ত্রণে আনতে খামারি ও পণ্য সরবরাহকারীদের দিকে নজর দিতে হবে বলে জানিয়েছেন কৃষি বিপণন ও প্রাণী সম্পদের অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, নারায়ণগঞ্জে যৌক্তিক মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি দামে ডিম ও মুরগি বিক্রি হলে সংশ্লিষ্ট দোকানী বা ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা যায়। ডিম ও মুরগির দাম যৌক্তিক মূল্যের কাছে নিয়ে আসতে খামার-সরবরাহকারীদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন যা স্ব স্ব অধিদপ্তর থেকে পদক্ষেপ নিতে হবে।

 


কৃষি বিপণন কর্মকর্তা ইবনুল ইসলাম বলেন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর হতে মুরগির ডিম ও ব্রয়লার মুরগির যে মূল্য দেওয়া হয়েছে তা হলো যৌক্তিক মূল্য। ঠিক এ মূল্যেই যে ব্রিক্রি হবে এমন নয়, বাজারে ডিম ও মুরগি এ মূল্যের চাইতে কিছুটা কম বা বেশিতে বিক্রি হতে পারে। তবে যদি দামের পার্থক্য যদি অনেক হয়, যেমন মুরগির দাম ২০০ টাকা কেজি হয়েছে সে লক্ষে আমরা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবো। রশিদ সহ দোকানে বেশি মূল্যে ডিম ও মুরগি বিক্রি হলে জরিমানা করা হচ্ছে। আবার রশিদ না থাকলেও জরিমানা করা হচ্ছে।

 


তিনি বলেন, যদি আমরা খতিয়ে দেখার সময় জানতে পারি, নারায়ণগঞ্জের কোন দোকানী বেশি মূল্যে সরবরাহকারী হতে ডিম-মুরগি সংগ্রহ করা হয় তবে এক্ষেত্রে সেই সরবরাহকারীর দিকে নজর রাখতে হবে। তবে বেশিরভাগ সরবরাহকারী ও খামার নারায়ণগঞ্জের বাইরে। জেলা পর্যায়ে আমরা শুধু বাজারগুলোই মনিটরিং করতে পারছি। এর উপরে যদি খামার ও সরবরাহকারী পর্যায়ে মূল্য নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নিতে হয়, তার জন্য আমরা কৃষি বিপণনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আবেদন করছি। খামার-সরবরাহকারীদের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। তবে এখনও কোন একশন নেয়া হয়নি।    

 


জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আ. মান্নান মিয়া বলেন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে আমাদের এই ডিম ও মুরগির যৌক্তিক মূল্যের তথ্য জানানো হয়েছিল। কিন্তু বাজারে গিয়ে দেখছি, দামে মুরগি ও ডিম বিক্রি হচ্ছে না। আমরা বাজারগুলোতে কয়েকবার তদারকি করেছি। তবে সেখানের বিক্রেতারা বলছেন, খামার ও সাপ্লাইয়ের থেকে যে র‌্যাট তাদের দেয়া হচ্ছে সে হিসাবেই তারা বিক্রি করছেন।

 

 

আমরা অধিদপ্তরকে এ নিয়ে খামার ও সাপ্লাইয়ার ব্যাপারে যথাপোযুক্ত ব্যবস্থা নিতে আবেদন করেছি। আমাদের যে নির্দেশনা দেয়া হবে, সে অনুযায়ী আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।     এন. হুসেইন রনী  /জেসি