শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

সস্তাপুরবাসীর গলার কাঁটা তিন ডাইং

সাইমুন ইসলাম

প্রকাশিত: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  

 

# হলি, কাদির ও প্রধান ডাইংয়ের বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর এর হস্তক্ষেপ কামনা এলাকাবাসীর

 

 

সস্তাপুর এলাকাটি প্রায়শই নেতিবাচক খবরের কারণে শিরোনাম হয়। এর মধ্য অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো  দূষণ সমস্যা। সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায় এ জনপদে  আকবর ও কাদির এই দুই ভাইয়ের মালিকানাধীন দুই ডাইং আকবর (প্রধান) ডাইং ও কাদির ডাইং এবং আনজু নামক এক ব্যক্তির মালিকানাধীন হলি ডাইংয়ের তীব্র দূষণে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। এই তিনজন কোনো নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে পরিবেশ অধিদপ্তরের নীতিমালা মান্য না করেই তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। যা সম্পূর্ন নিয়ম বহির্ভূত।

 

সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায় ডাইংগুলোর কালো ধোঁয়ায় অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে আছে গোটা এলাকা। শুধু তাই নয় ডাইং এর ফলে সৃষ্টি হয় তীব্র জলাবদ্ধতা আর সেই সেই জলাবদ্ধতার পানি মূলত বিষাক্ত ক্যামিকেল মিশ্রিত পানি যা কারো সংস্পর্শে আসলে সৃষ্টি হয় নানাবিধ জটিল চর্মরোগ। আর বিষাক্ত ধোঁয়ার কারণে সৃষ্টি হয় শ্বাসনালীর জটিলতা।

 

সূত্র মতে, এই ডাইংগুলোর নেই কোনো পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। তারা নিয়ম বহির্ভূতভাবে কাঠ পুড়িয়ে, ঝুট এর সাথে বিষাক্ত ক্যামিকেল পুড়িয়ে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এতে করে মারাত্মক হুমকির মুখে পরেছে এ জনপদের মানুষের জনস্বাস্থ্য।

 

হলি ডাইং এর মালিক আনজুর সাথে এ ব্যাপারে কথা বললে প্রদত্ত তথ্য মতে, এ ডাইংটির নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো ছাড়পত্র। নেই কোনো ইটিপি। শুধু তাই নয় তারা জ্বালান হিসেবে কয়লা ব্যবহার করে আসছে। যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। পাশাপাশি তাদের নেই কোনো ইটিপি। যার ফলে ক্যামিকেল মিশ্রিত পানি কোনো পরিশোধন ছাড়াই জলাশয়ে যাচ্ছে।

 

এ বিষাক্ত পানিগুলোই আসছে বর্ষা মৌসুমে রাস্তায় এসে জমা হবে যা হবে চর্ম রোগের অন্যতম কারণ। তবে এ নিয়ে হলি ডাইং এর মালিক আনজুর নেই সামান্যতম অনুতপ্তবোধ। তিনি নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থে গোটা এলাকার ব্যাপক ক্ষতি করে আসছেন। এ নিয়ে কেউ মুখ না খুললেও ক্ষোভের অন্ত নেই জনমনে।

 

কাদির ডাইং এর সামনে গিয়ে দেখা যায় সন্ধ্যার পর পুরো এলাকা পানিতে তলিয়ে রয়েছে। কাদির ডাইং ও ঢাকা টেক্সটাইল এর সামনে থই থই করছে বিষাক্ত পানি। এ নিয়ে কাদির ডাইং এর মালিক কাদির জানান এ পানি শুধু আমার ডাইং এর একার নয়।

 

পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, এ তিনটি ডাইংই অবৈধভাবে চলছে। কাদির ডাইং বরাবর পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ইতিমধ্যে নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। প্রধান ডাইং থেকে ইতিমধ্যে এনফোর্সমেন্ট কার্যক্রমের মাধ্যমে ক্ষতিপুরন আদায় করা হয়েছে। এবং হলি ডাইং বরাবর পরিবেশ অধিদপ্তর নোটিশ প্রদান করেছে। তবে এতকিছুর পরও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এসব ডাইংগুলো স্থায়ীভাবে বন্ধ না হওয়ায় এলাকাজুড়ে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন জানান, এ ডাইংগুলোর কারণে আমরা দীর্ঘদিন ধরে অনেক সমস্যায় আছি। এদের কালো ধোঁয়ার কারণে আমাদের বুকে সমস্যা দেখা দিয়েছে। নিঃশ্বাস নিতে এখন কষ্ট হয়। বৃষ্টির দিনে এই ডাইং এর কারণে পানি পায়ে লাগলে পা পঁচে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়। তবে কারো অসুবিধার কথা চিন্তা না করে তারা তাদের স্বার্থের জন্য ঝুঁকিতে ফেলছে গোটা এলাকার বাসিন্দাদের। যা মোটেও কাম্য নয়। তিনি এ ডাইং বন্ধ করে দিয়ে এ এলাকার মানুষদের এ অসহনীয় অবস্থা থেকে মুক্তির দাবি জানান।

 

আরেকজন জানান, পরিবেশ অধিদপ্তরকে ম্যানেজ করেই দীর্ঘদিন ধরে চলছে তাদের অরাজকতা। তবে এসব ডাইং নিয়ে মালিকপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে তারা তারা জানান জরিমানা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর তবে জরিমানার পরও নিয়ম বহির্ভুতভাবে কেনো এখনও চালাচ্ছেন এমন প্রশ্নের কোনো উপযুক্ত জবাব দেয়নি কেউ। তবে এলাকাবাসী চায় এসব অবৈধ ডাইং এর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে এলাকাকে অভিশাপ মুক্ত করা হোক।

 

এখন দেখার বিষয় পরিবেশ অধিদপ্তর এলাকাবাসীর এ সমস্যা সমাধানে কি উদ্যোগ গ্রহন করে। তারা এসব ক্ষতিকর প্রতিষ্ঠান স্থায়ীভাবে বন্ধ দেখতে চায়। কারণ এদের জরিমানা করা হলে তারা পুনরায় এসব কার্যক্রম চালু রাখে। এস.এ/জেসি
 

এই বিভাগের আরো খবর