রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

সিটিতে জোরালো কার্যক্রম ইউনিয়ন পরিষদ গুলোতে নাজুক অবস্থা

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩  

 

#  ওয়ার্ডের প্রতি ১ ড্রাম ঔষধ ও ১ টি মেশিন প্রয়োজন : সাইফুল্লাহ বাদল
#  প্রয়োজনের তুলনায় বরাদ্দ কম : আসাদুজ্জামান
#  চেয়ারম্যানদের সাথে এ বিষয়ে আলোচনা করবো : ইউএনও

 

 

দিন যত যাচ্ছে ততই প্রকট হচ্ছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘন্টায় সারাদেশে ডেঙ্গুতে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই সময়ে আক্রান্ত হয়েছে ১ হাজার ৭৪৮ জন। চলতি মাসের প্রথম থেকেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বাড়ছেই।  এ মাসের ৯ দিনেই মারা গেছে ১২৩ জন। 

 

সব মিলিয়ে চলতি বছর মারা গেছে ২২৬ জন। সারাদেশের ন্যায় নারায়ণগঞ্জেও এ পরিস্থিতি বিদ্যমান। তবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে সিটির বাসিন্দাদের সুরক্ষায় যেভাবে কার্যক্রম চালাচ্ছে কাউন্সিলররা তার ব্যতিক্রম ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে। এক্ষেত্রে অনেকটাই অবহেলিত ইউপির বাসিন্দারা।

 

সিটি কর্পোরেশনের বেশ কয়েকটি ওয়ার্ড সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায় যে, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রনে  ব্যাপক কার্যক্রম চলমান রয়েছে।ওয়ার্ড জুড়ে ডেঙ্গু সচেতনায় পোস্টারিং ও লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। মসজিদে মসজিদে গিয়ে সচেতনতা মূলক বক্তব্য ও লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, সিটি কর্পোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডে ৫ জন করে মশক নিধন কর্মী দেওয়া আছে। তারা প্রতিদিন ২ থেকে ৩ বেলা গোটা ওয়ার্ড জুড়ে নিয়মিত মশার ঔষধ প্রয়োগ করছেন।

 

এ নিয়ে সিটি কর্পোরেশনের ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন বলেন, আগে আমরা ২ বেলা করে মশক নিধন কর্মসূচী পালন করতাম। বর্তমানে এর প্রকোপ বেশি বিধায় ৩ বেলা করে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। আমাদের যথেষ্ট পরিমানে ঔষধ রয়েছে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রনে আমরা বদ্ধ পরিকর।

 

এ বিষয়ে ৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাজী নুরুদ্দীন বলেন, বর্তমানে ডেঙ্গুর প্রকোপ অত্যাধিক। এর জন্য আমি পুরো ওয়ার্ড জুড়ে সচেতনতার লক্ষে পোস্টারিং করেছি। লিফলেট বিতরণ করেছি। ৩ বেলা করে ঔষধ দিচ্ছি। আমাদের যথেষ্ট পরিমানে ঔষধ রয়েছে।

 

এ ব্যাপারে ৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রিপন জানান, আমাদের প্রতিটি ওয়ার্ডে ৫ জন করে মশকনিধন কর্মী প্রতিনিয়ত কাজ করছে।প্রতিদিন ৩ বেলা করে ঔষধ দিচ্ছে। লিফলেট বিতরণ করছি। সচেতনতা বৃদ্ধি করছি।

 

অন্যদিকে ফতুল্লার থানার অর্ন্তগত ৫ টি ইউনিয়ন ঘুরে ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। সেখানে নামকাওয়াস্তে চলছে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রন কার্যক্রম। প্রতিটি ইউনিয়নের জন্য একটি মাত্র স্প্রে মেশিন ও ১ ড্রাম ঔষধ  বরাদ্দ আছে। একটি ইউনিয়নে ওয়ার্ড রয়েছে ৯ টি। ১ টি মেশিন যদি ১ টি ওয়ার্ডে একদিন করে ঔষধ প্রয়োগ করে তাহলে গোটা ইউনিয়ন শেষ করতে ৯দিন লেগে যাবে। অর্থাৎ ৯ দিন পর পর ওয়ার্ড ভিত্তিক ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ আসে। অর্থাৎ বরাদ্দ সংকটে ধুকছে ইউনিয়ন পরিষদের ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রন কার্যক্রম।

 

এ ব্যাপারে কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল্লাহ বাদল বলেন, আমাদের যে পরিমান ঔষধ বরাদ্দ দেওয়া আছে তা যথেষ্ট নয়। পুরো ইউনিয়নের জন্য একটি মাত্র স্প্রে মেশিন দেওয়া আছে। যা দিয়ে পুরো ইউনিয়ন কাভার করা যায় না। প্রতিটি ইউনিয়নে যদি একটি করে স্প্রে মেশিন ও ১ ড্রাম করে করে ঔষধ দেওয়া হতো তবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে গতি আসতো।

 

এ ব্যাপারে এনায়েতনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে যে পরিমান স্প্রে মেশিন ও ঔষধ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তা যথেষ্ট নয়। আমি ব্যক্তিগত উদ্যোগেও মেশিন ও ঔষধ কিনে প্রয়োগ করছি। স্প্রে মেশিন ও মানসমপন্ন ঔষধ যদি আরো বেশি পরিমানে দেওয়া হতো তবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রনে গতিশীলতা বৃদ্ধি পেতো।

 

এ ব্যাপারে কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল আলম সেন্টু বলেন, আমরা প্রতিদিন ইউনিয়নের বিভিন্ন স্পটে মশক নিধন কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি। তবে যে পরিমান ঔষধ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তা দিয়ে এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব না। বরাদ্দের পরিমান আরোও বাড়ানো জরুরী।

 

এ ব্যাপারে সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রিফাত ফেরদৌস এক সাক্ষাতকারে যুগের চিন্তাকে বলেন এক ড্রাম ঔষধ এর দাম ৭০ হাজার টাকা। এটা একটা ব্যয়বহুল কাজ। তবুও এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে আমরা সকল চেয়ারম্যানদের সাথে বসবো এবং আলোচনা করবো।

 

এ ব্যাপারে সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আজাদ বিশ্বাস বলেন, এ ব্যাপারটা আমি কাল আলোচনা করবো।

 

এ ব্যাপারে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বাবু চন্দন শীল বলেন, ব্যাপারটা উপজেলা পরিষদ দেখবে। এটা তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন। তারপরও আমি দেখবো কিছু করা যায় কিনা। তবে ইউনিয়ন পরিষদের বাসিন্দারা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আরোও তৎপর হওয়ার আহ্বান জানান। এস.এ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর