সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

সিদ্ধিরগঞ্জ মাদানীনগর কওমী মাদরাসায় শিক্ষার্থীকে অমানবিক নির্যাতন

সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২০ অক্টোবর ২০২২  


সিদ্ধিরগঞ্জে দারুল উলূম মাদানীনগর মাদ্রাসার (কওমী) হেফজ বিভাগের এক ছাত্রকে অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে শিক্ষক সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে। ঘটনার চার দিন পর ছাত্রের পাছায় আঘাতের দাগ দেখে তার অভিভাবক পুলিশ ও গণমাধ্যম কর্মীদের জানায়।

 

 

বুধবার (১৯ অক্টোবর) বিকেলে পুলিশ ও গণমাধ্যম কর্মীরা মাদ্রাসায় গিয়ে নির্যাতনের সত্যতা পান। নির্যাতনের শিকার ছাত্রের নাম আব্দুল্লাহ তালহা (১১)। সে ব্রাহ্মনবাড়ীয়া জেলার কসবা থানার চকবাস্তা গ্রামের আব্দুল হালিম অপুর ছেলে।  

 

 

নির্যাতিত ছাত্র জানায়, পড়া মুখস্থ বলতে না পাড়ায়; গত রোববার ফজরের নামাজের পর শিক্ষক সাইফুল ইসলাম আমাকে আধাঘন্টা পর্যন্ত মারধর করে। পাকার উপর ফেলে পাছার মধ্যে আঘাত করে। আমি অসুস্থ হয়ে পড়লে মা বাবাকে জানালে আরো মারবে বলে ভয়দেখায়, আমাকে মাদ্রাসা থেকে বের হতে দেয়নি।

 

 

ছাত্রের পিতা আব্দুল হালিম অপু জানান, গত সোমবার আমার স্ত্রী ছেলেকে দেখতে গিয়ে মারধরের বিষয়টি জানতে পারে। ছেলের পাছায় আঘাতের দাগ দেখে আমার স্ত্রী কান্নায় ভেঙে পড়ে ফোনে আমাকে জানায়। পরে আমি মঙ্গলবার মাদ্রাসায় গিয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে তারা বিষয়টি দেখবে বলে জানায়।

 

 

তবে মাদ্রাসার প্রিন্সিপালের সাথে আমাকে দেখা করতে দেয়নি।  এদিকে আব্দুল হালিম বুধবার বিকেলে ঘটনাটি সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ ও গণমাধ্যমকর্মীদের জানিয়ে ছেলেকে নিয়ে মাদ্রাসায় যায়। এসময় বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স ও প্রিন্টমিডিয়ার সাংবাদিকদের কাছে ঘটনার বর্ণনা দেন।  

 

 

এবিষয়ে মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা ফয়জুল্লাহর সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি মাদ্রাসায় উপস্থিত নেই বলে জানায় শিক্ষকরা। তবে তিনি আসতেছেন বলেও অন্তত ১ ঘন্টা অপেক্ষা করার পরও তিনি আর আসেননি। পরে তার পক্ষে মাদরাসার সিনিয়র শিক্ষক হাফেজ মাওলানা আবুল ফাতাহ বলেন, বিভিন্ন ব্যস্ততার কারণে ঘটনাটি অবগত হতে পারিনি।

 

 

তবে বুধবার সকালে বিষয়টি জানার পর তাৎক্ষণিক মিটিং ডেকে অভিযুক্ত শিক্ষক সাইফুল ইসলামকে মাদরাসা থেকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি কোন শিক্ষক যেন শিক্ষার্থীদের উপর এমন নির্যাতন না করে সবাইকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।

 

 

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক শহিদুল ইসলাম বলেন, শিশুটির উপর অমানবিক নির্যাতনের সত্যতা পেয়েছি। তার অভিভাবকরা যদি থানায় লিখিত অভিযোগ করেন, তাহলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।  নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাদরাসার একাধিক ছাত্র জানায়, মাদরাসায় প্রতিনিয়তই অমানবিক ছাত্র নির্যাতনের ঘটনা ঘটে।

 

 

এসব ঘটনা ছাত্ররা যেন অভিভাবকদের না জানায় সেজন্য আরো নির্যাতনের ভয় দেখায়। ফলে মারধরের ভয়ে কেহ মুখ খুলেনা। নির্যাতন সইতে না পেরে অনেক ছাত্র পালিয়েও গেছে।  একাধিক অভিভাকের অভিযোগ, আবাসিক ছাত্রদের জন্য মাসে আড়াইহাজার টাকা খাওয়া খরচ নিলেও কর্তৃপক্ষ খুবই নিন্মমানের খাবার দেয়।

 

 

এসব খাবার অনেক শিক্ষার্থী খেতে পারেনা। নিন্মমানের খাবার খেয়ে অনেক শিক্ষার্থী রোগা হয়ে পড়ে। এসব জানার পর অনেকই তাদের সন্তানদের এই মাদ্রাসা থেকে অন্য মাদ্রাসায় নিয়ে ভর্তি করেছে। এন.এইচ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর