বৃহস্পতিবার   ১২ ডিসেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ২৭ ১৪৩১

সেলিম ওসমানের নির্দেশে সভাপতি হাতেম

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৮ ডিসেম্বর ২০২৪  

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে নারায়ণগঞ্জে শীর্ষ গডফাদার ওসমান পরিবার পালিয়ে গেলেও তাদের দোসররা এখনো বিভিন্ন সেক্টরে রাজত্ব করছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ওসমান পরিবারের নির্দেশে নারায়ণগঞ্জ থেকে পরিচালিত দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানগুেেলা এখনো পরিচালিত হচ্ছে। এমনি একটি গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ)। এই সংগঠনের সভাপতি হিসেবে ২০১০ সাল থেকে বিনা নির্বাচনে দায়িত্বে ছিলেন সাবেক সাংসদ সেলিম ওসমান। তার সঙ্গে দীর্ঘ ১১ বছর ধরে সহসভাপতির দায়িত্ব পালন শেষে ২০২১ সাল থেকে নির্বাহী সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন ওসমান পরিবারের শীর্ষ সহযোগী হিসেবে পরিচিত মোহাম্মদ হাতেম। ৫ আগস্টের পর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সেলিম ওসমান আত্মগোপনে চলে যাওয়ার পর তাঁর নির্দেশে সংগঠনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন মোহাম্মদ হাতেম। এক্ষেত্রে খোদ সেলিম ওসমান ২৪ আগস্ট চিঠি দিয়ে ব্যবসায়ীদের চিঠি দিয়ে সভাপতি হিসেবে হাতেমকে গ্রহণ করতে নির্দেশনা দেন। 

 

২৪ আগস্ট সেলিম ওসমান শারীরিক অসুস্থতার কারণে বিকেএমইএ'র সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনে অপারগতা এবং সেই কারণে বিকেএমইএ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হিসেবে পদত্যাগ প্রসঙ্গে চিঠি পাঠান। ২৫ আগস্ট বিকেএমইএ অফিস সেটি গ্রহণ করেন। সেই দিনই (২৫ আগস্ট)  বিকেএমইএর পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটির শীর্ষ পদে রদবদলের কথা জানানো হয়। এতে বলা হয়, বিকেএমইএর ঢাকা কার্যালয়ে সংগঠনের পরিচালনা পর্ষদের বোর্ড সভায় নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়। এর আগে শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে এ কে এম সেলিম ওসমান সংগঠনের সভাপতির দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করে পদত্যাগের ঘোষণা দেন, যা পর্ষদে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। পর্ষদ সভায় অনলাইনে যুক্ত হয়ে বিদায়ী সভাপতি সেলিম ওসমান বক্তব্যও দেন।

একেএম সেলিম ওসমানের ২৫ আগস্টের পদত্যাগপত্রে উল্লেখ করেন, প্রিয় সহকর্মী, ১। বিকেএমইএ'র পরিচালনা পর্ষদের (২০২৩-২৫) সকল সদস্যকে আমি অন্তরিক ধন্যবাদ জানাই বিকেএমইএ'র সভাপতি হিসেবে আমাকে দায়িত্ব পালনে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করায়। আপনাদের সহযোগিতা ছাড়া বিকেএমইএ-কে এবং নীট সেক্টরের উন্নতির জন্য কাজ করা সম্ভবপর ছিলনা। আপনাদের মেধা, মনন ও পরামর্শ নিয়েই আমি বিকেএমইএ'র সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। আপনাদের প্রতি তাই আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। একইসাথে ২০১০ সালের জুলাই মাসে বিকেএমইএ'র সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে যতগুলো পরিচালনা পর্ষদ গঠিত হয়েছে, সেই সফল পরিচালনা পর্ষদের সফল সদস্যদের আজকের দিনে স্মরণ করে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। দীর্ঘ এই ১৪ বছরের পথ চলায় যেসকল সহকর্মীরা ইতোমধ্যেই এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন, তাদের প্রতিও আমার সশ্রদ্ধ কৃতজ্ঞতা। বিষয়ের বহুল্যতা এই যে, আপনারা সবাই জানেন, বিগত বেশ কিছুদিন ধরে আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ। কয়েক মাস-অন্তর আমাকে চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যেতে হচ্ছে। পরিস্থিতি এমন হয়েছে কখনো কখনো আমাকে লম্বা সময় ধরে চিকিৎসা গ্রহণের জন্য দেশের বাইরে থাকার বাধ্যবাধকতা থাকছে, কিন্তু দায়িত্বের কারণে চিকিৎসা অর্ধসমাপ্ত রেখে আমাকে ফিরে আসতে হয়েছে। ফলে আমার শারীরিক ক্ষতি আরও বেশি হেেয় এখন শারিরীক সমস্যা অধিকতর তীব্রতর হয়েছে বিধায়, আমার পক্ষে বিকেএমইএ'র সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা আর সম্ভবপর হচ্ছে না। তাই এই পত্রের মাধ্যমে বিকেএমইএ'র সভাপতি'র পদ এবং একইসাথে পরিচালক পদ থেকে আমি অব্যাহতি নিলাম। বিকেএমইএ'র পরিচালনা পর্ষদের সকল সদস্যদের কাছে আমার এই আবেদন অনুমোদন করার জন্য সবিনয়ে অনুরোধ রাখছি। আপনাদের সকলকে সহযোগিতার জন্য আবারও ধন্যবাদ।

২। অনেক আগেই বিকেএমইএ'র সভাপতি হিসেবে আমার চলে যাবার কথা ছিল। কিন্তু নারায়ণগঞ্জের চাষাড়ায় বিকেএমইএ'র কমপ্লেক্স ভবন তৈরির সদস্যদের আকারদর প্রতি সম্মান রেখে আমি দায়িত্ব পালন করে গেছি। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, অনেক বাঁধা পেরিয়ে, অসাধারণ চেষ্টা ও প্রয়াসের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জের চাষাড়ায় বিকেএমইএ'র প্রধান কার্যালয় ভবন আমি আপনাদের সকলের সহযোগিতা নিয়ে তৈরি করতে পেরেছি। আমি সবসময় চেয়েছি, বিকেএমইএ'র প্রধান কার্যালয় ভবনটি নারায়ণগঞ্জে তৈরি করতে এবং অল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে এবং আপনাদের সহযোগিতায় সেই স্বপ্ন আজ বাস্তবে রূপলাভ করেছে। আজ নারায়ণগঞ্জের সবচেয়ে সুন্দর ভবনের মধ্যে বিকেএমইএ'র কমপ্লেক্স ভবন একটি। এই গৌরব আমার, আপনার এবং নীট সেক্টর সংশ্লিষ্ট সকল উদ্যোক্তাদের। এই অসাধারণ কাজ সম্পন্ন করতে সহায়তা করায় আপনাদের সকলকে আরও একবার ধন্যবাদ।

৩। যেহেতু আমি চলে যাচ্ছি, সেহেতু আমি বর্তমান পরিচালনা পর্ষদে আমাদের যেসকল সিনিয়র পরিচালকগণ রয়েছেন এবং যারা বিশেষ করে ব্যবসার কাজে ব্যস্ততার কারণে বিকেএমইএতে সময় দিতে পারছেন না, তাদের কাছে সবিনয়ে অনুরোধ রাখব নীট সেক্টর ও বিকেএমইএ'র বৃহত্তর স্বার্থে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে নতুন প্রজন্মকে কাজ করার সুযোগ করে দিতে। এতে করে নতুন প্রজন্ম নতুনভাবে বিকেএমইএ-কে এগিয়ে নিতে পারবে এবং একটি আধুনিক বিকেএমইএ ও উন্নত নীট সেক্টর গড়তে তারা আরও বেশি উৎসাহ ও উদ্দীপনা পাবে।

৪। আপনারা সকলেই স্বীকার করবেন যে, বর্তমান নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম দীর্ঘদিন ধতে আমাকে, বিকেএমইএ-কে ও নীট সেক্টরের উন্নতির জন্য সহায়তা করে গেছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমি পরিচালনা পর্ষদের সকলের কাছে অনুরোধ রাখতে চাই, আমার বিদায়ের পর পর বিকেএমইএ ও নীট সেক্টরের উন্নয়ন কল্পে মোহাম্মদ হাতেম এর অবদান এবং প্রচেষ্টার কথা স্মরণ করে তাকে এই নতুন বিকেএমইএ পরিচালনার জন্য সভাপতি'র দায়িত্বভার অর্পণ করা হোক। আপনাদের প্রতি এই আমার বিশেষ অনুরোধ।

৫। সবাই ভালো থাকবেন। সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা। বিকেএমইএ'র সকল কর্মকর্তা কর্মচারীদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা। আগামীতে একটি গতিশীল বিকেএমইএ দেখার প্রত্যাশায় থাকব।

এদিকে ছাত্রজনতার গণআন্দোলনে ফ্যাসিস্টদের বিদায়ের পর আবার ফ্যাসিস্ট সরকারের ব্যক্তির প্রেসক্রিপশনে বিনা নির্বাচনে তাদেরই দোসর মোহাম্মদ হাতেমকেই সভাপতি বানানো হয়েছে। এখনো পুরো বিকেএমইএ’র পর্ষদে হাতেম ছাড়াও ওসমানদের আরো দোসররা বর্তমান। সর্বশেষ এই অসন্তোষ নিয়েই অনুষ্ঠিত ৫ ডিসেম্বর বিকেএমইএ’র বিশেষ সাধারণ সভাতেও (ইজিএম) হাতেমের স্ট্যান্টবাজিতে ত্যক্ত-বিরক্ত বিকেএমইএ’র সদস্যরা। ঢাকায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে গ্র্যান্ডবলরুমে বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত এই ইজিএমে প্রায় ১৫০জন সদস্য অংশগ্রহণ করলেও বেশিরভাগ টেবিলেই হাতেমকে নিয়ে জোর সমালোচনা চলে। উপস্থিত ব্যবসায়ীরা হাতেমের স্ট্যান্টবাজিতে হতবাক ও বিস্মিত। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, ইজিএম অনুষ্ঠানে মোহাম্মদ হাতেম বারবার ঘোষণা করতে থাকেন বিকেএমইএর এই অনুষ্ঠানে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের দুই প্রধান সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহ উপস্থিত থাকবেন। অনুষ্ঠান শুরুর পর থেকে তিনি বলেই যাচ্ছেন এই তো তারা চলেই আসছেন। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা উপস্থিত হবেন। এই তো তারা লিফটের উঠার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, এই তো তারা এক্ষুনি চলে আসবেন। কিন্তু আদতে শেষ পর্যন্ত তাদের কেউই বিকেএমইএ’র এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হননি। বারবার এই স্ট্যান্টবাজির অর্থ ছিল, হাতেম বোঝাতে চেয়েছেন, তার সাথে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের নেতাদের গভীর সম্পর্ক। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ব্যবসায়ীদের এই অনুষ্ঠানে তো তাদের আসারই কথা না। কিন্তু হাতেম এটি দিয়ে বোঝাতে চেয়েছেন তিনি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারেও কাছের লোক। অথচ তিনি যে, শেখ হাসিনা সরকার ও ওসমানদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ তা তো ভিডিও বক্তব্য ও পত্রিকার পাতায় স্পষ্ট প্রমাণ আছে। সারাদেশের মানুষ যে তার অতীত কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানে সেটি তিনি ভুলেই গেছেন, আর ব্যবসায়ীরা তো খুব ভালো করেই জানেন হাতেম গত ১৫ বছর যাবৎ ওসমানদের হয়ে কী কী করেছেন। অনেকে টিপ্পনী কেটে কানাঘুষো করেন, কে বসালো হাতেমকে সভাপতির পদে নির্বাচন ছাড়া! তিনি ৫ আগস্টের পর কী করে হর্তাকর্তা বনে গেলেন। আর তার এই কমিটিতে তো অনেক ওসমানীয় বলয়ের লোকে ভরপুর। তিনিও তাদের মধ্যে অন্যতম। গত নভেম্বর মাসেই তো তাকে ফ্যাসিস্টদের দোসর খেতাব দিয়ে কমিটি থেকে পদত্যাগ করেন সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মনসুর আহমেদসহ আরো একজন। পরবর্তীতে অবশ্য তারা পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করেন। অনেকে বলছেন, দূর থেকে সেলিম ওসমানের চাপেই তিনি পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।  পদত্যাগপত্র যে চাপে প্রত্যাহার করা হয়েছিলো সেটি বুঝা গেছে, ইজিএম সভায় মনসুর আহমেদ অনুপুস্থিত ছিলেন।



এদিকে ওসমানদের অন্যতম দোসর মোহাম্মদ হাতেম বিকেএমইএ’র শীর্ষ পদ দখল করে থাকায় এখনো আতঙ্কে ব্যবসায়ীরা। হাতেমের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে বিসিকের ঝুট সেক্টরও টোকেনের মাধ্যমে বিতরণ করে সেখানে বিএনপি কর্মীদের মধ্যে সংঘাত লাগানোর আশঙ্কা করছেন বিশিষ্টজনেরা। তাছাড়া এতো বড় ব্যবসায়ীক সংগঠনের নেতৃত্বে থেকে ওসমান দোসররা ফ্যাসিস্ট সরকারের নানা এজেন্ডা বাস্তবায়নেও আর্থিক যোগান দেয়ার ভয়াবহ ষড়যন্ত্র করতে পারেন বলে অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

এব্যাপারে জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘স্বৈরাচারের দোসররা স্বৈরাচারকে সহযোগিতা করবে, এটি খুব স্বাভাবিক। এদের দ্রুত এসব গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে অপসারণ করতে হবে। সকল ভয়-শঙ্কা-জড়তা দূরে সরিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে থেকেই তীব্র প্রতিবাদ উঠাতে হবে। নারায়ণগঞ্জ ও এই জেলার বাইরে দায়িত্ব নেয়ার মতো বহু ভালো ব্যবসায়ী রয়েছেন, তাদের কাছেই দায়িত্ব ছাড়তে বাধ্য করতে হবে। ভালোভাবে দায়িত্ব ছাড়তে না চাইলে এদেরকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকেই ব্যবস্থা নিয়ে দ্রুত অপসারণ করতে হবে। ফ্যাসিস্ট সরকারে যারা ছিল, তারাই এখন তাদের দোসরদের দিয়ে নানা ষড়যন্ত্র করছে।

বিসিকের ঝুট ব্যবসায় হাতেমের নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন বলেন, ‘বিভিন্নজনদের কাছ থেকেই খবর পাচ্ছি, বিসিক এলাকায় তিনি নানা জনকে ডেকে নিয়ে ঝুটের ব্যবসা দিচ্ছেন। অনেকে লোভে তাঁর ফাঁদে পাও দিচ্ছেন। আসলে এখানে তিনিই (হাতেম) লাভবান হচ্ছেন। নানাজনকে ডেকে নিয়ে যেই ব্যবসার লোভ দেখাচ্ছেন, সেখানে আদতে গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে। ব্যবসার লোভে বিএনপি নেতাকর্মীরা সেখানে গেলে ঝুটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সংঘাত তৈরি করার চেষ্টা হবে। আর তখন এরাই আবার প্রচারণা চালাবে, বিএনপির লোকজন ঝুটের নিয়ন্ত্রণ নিতে গিয়ে সংঘাত করছে। তাই আমাদের সকলের সচেতন হতে হবে, এদের ফাঁদে তো পা দেয়াই যাবেনা। দ্রুত গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো থেকে ফ্যাসিস্টদের দোসরদের অপসারণ করতে হবে।’


বিকেএমইএ’র সভাপতি পদে ওসমানদের দোসরদের অবস্থান নিয়ে বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সন্ত্রাস নির্র্মূল ত্বকী মঞ্চের আহবায়ক রফিউর রাব্বি যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘গত ১৬ বছর ধরেই নারায়ণগঞ্জের সকল ব্যবসায়িক সংগঠন বিকেএমইএ, চেম্বার অব কমার্স, ইয়ার্ন মার্চেন্ট এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ হোসেয়ারি এসোসিয়েশনসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রণে ওসমানরাই ছিল। রাইফেল ক্লাবও ছিল তাদের নিয়ন্ত্রণে। এসব সংগঠনই ছিল তাদের আয়ের অন্যতম উৎস, ক্ষমতার অন্যতম উৎস। গত ১৫ বছর ধরেই তারা একচ্ছত্রভাবে এই সংগঠনগুলোকে ব্যবহার করেছে। এসব সংগঠনের অনেক মেরুদণ্ডহীন ব্যবসায়ীরাই তাদের ওইসব অপকর্মে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করেছে। এটা দুর্ভাগ্য যে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট সরকারের ওসমানরা বিদায় হলেও তাদের দোসরদের হাতেই এসব সংগঠন। এখনো খুনী ওসমান পরিবারের প্রভাবে বিকেএমই’র মতো সংগঠন নিয়ন্ত্রণ করার দুঃখজনক। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্বে যারা আছেন, তাদেরকে অবশ্যই এবিষয়ে নজর দিতে হবে।’

রফিউর রাব্বি আরো বলেন, ‘ওসমান পরিবারের খুনী আজমেরী ওসমান, অয়ন ওসমানদের নিয়ন্ত্রণেই ছিল বিসিক। তারাই সেখানে সবসময় কলকাঠি নেড়েছে। এখনো তাই হচ্ছে। এই জায়গাগুলোতে ওসমানদের হয়ে এখনো তাদের দোসররা একচ্ছত্র বিচরণ করছে এমন অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে হরহামেশা। নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীরা এখনো পুরনো পরিস্থিতি থেকে মুক্ত হতে পারেনি। তাদের মেরুদণ্ড থাকলে এতো বছর নির্যাতিত, নিষ্পেষিত হওয়ার পর এখন তারা কারো হুমকি ধমকির তোয়াক্কা করতো না। প্রশাসনের যেমন দৃষ্টি দেয়া দরকার, তেমনি সরকারের দায়িত্বে যারা আছেন তাদেরও এবিষয়ে হস্তক্ষেপ করা উচিৎ।’

বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের অন্যতম সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর সাবেক আমীর মাওলানা মঈনুদ্দিন আহমদ যুগের চিন্তাকে বলেন, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোতে এখনো যে ওসমানদের দোসররা বহাল এব্যাপারে ব্যবসায়ীদেরই প্রথমে ভূমিকা রাখা উচিৎ। তিনি বলেন, বিকেএমইএ’র মতো বড় সংগঠনগুলো থেকে ওসমানদের ভূত বিতাড়িত করতে হবে। এদেরকে পরিহার করতে হবে। রাজনীতি নেতৃবৃন্দদেরও উচিৎ, এব্যাপারে ব্যবসায়ীদের উদ্বুদ্ধ করা। প্রশাসনের উচিৎ এব্যাপারে এগিয়ে আসা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিভিন্ন দায়িত্বে যারা রয়েছেন, তাদেরও এগিয়ে আসা উচিৎ, এদেরকে পরিহার করার ব্যাপারে।

এছাড়া তিনি বলেন, বিসিকের ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণকে ঘিরে যারা ব্যবসায়ীদের চাপ দিচ্ছেন, তাদের ব্যাপারে প্রশাসনের খোঁজ-খবর নেয়া উচিৎ। কাউকে চাপে ফেলা যাবেনা, যার যেভাবে ইচ্ছা নিয়মতান্ত্রিকভাবে ব্যবসা পরিচালনা করবে, অন্যরা এখানে হস্তক্ষেপ করবেনা।  

প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর থেকে বিকেএমইএর সভাপতির পদে ছিলেন সেলিম ওসমান। সর্বশেষ ২০১২ সালে ভোটের মাধ্যমে সভাপতি হন তিনি। তারপর ২০১৪, ২০১৬, ২০১৯, ২০২১ ও ২০২৩ সালে সমঝোতার মাধ্যমে পর্ষদ করে সভাপতি হন সেলিম ওসমান। কিছুদিন আগে বিলুপ্ত জাতীয় সংসদে তিনি নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সদস্য ছিলেন। তাঁর ভাই শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন। বিকেএমইএতে প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের কারণে টানা পাঁচবার সমঝোতার মাধ্যমে পর্ষদ গঠন করা হলেও সংগঠনের উদ্যোক্তারা চুপচাপ ছিলেন। ৫ আগস্টের পর ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের পর ২৫ আগস্ট অসুস্থতার কথা বলে পদত্যাগ করেন সেলিম ওসমান। তার স্থলাভিষিক্ত হন মোহাম্মদ হাতেম।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালীন সময়ে ২০২৪ সালের ২২ জুলাই সোমবার বিকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে (তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) সাথে বৈঠকে বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মো. হাতেম বলেন, “যে তাণ্ডব আমরা গত কয়েক দিনে দেখেছি, আমরা আশা করব, সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাসহ অন্য যারা আছেন, তারা উদযাঘটন করবেন এবং আইনের আওতায় আনবেন।“ব্যবসায়ী সমাজ আপনার পাশে ছিল, থাকবে।” হাতেম বলেন, “দুটো অনুরোধ। কারখানাগুলো যদি আমরা চালু রাখতে পারি, তাহলে শ্রমিকরা ভেতরে সুশৃঙ্খল পরিবেশে থাকবে। বাইরে থাকলে তাদের অন্যরা ব্যবহার করতে পারে, তাদের ভেতরে থাকাটাই নিরাপদ। “ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। স্বল্প পরিসরে হলেও ইন্টারনেটটা যাতে চালু করা যায়।”

এই বিভাগের আরো খবর