বৃহস্পতিবার   ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪   পৌষ ১২ ১৪৩১

সোনারগাঁয়ে পাঁচ টাকার সাঁকোই ভরসা ২০ গ্রামের

সোনারগাঁ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১০ নভেম্বর ২০২৪  

 

আধুনিক যুগে এসেও ২০ গ্রামের বাসিন্দাদের ভরসা একটি সাঁকো। সেই সাঁকো পার হতে প্রতিবার দিতে হয় পাঁচ টাকা। শিক্ষা-চিকিৎসা আর প্রাত্যহিক কাজে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকো পারাপার হন কোমলমতি শিক্ষার্থী, নারী-পুরুষ ও অসুস্থ মানুষ। বাংলার প্রাচীন রাজধানী নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের নোয়াগাঁও গ্রামে ব্রহ্মপুত্র শাখানদীর ওপর এই সাঁকো। এ জায়গায়একটি সেতু নির্মাণে জনপ্রতিনিধিরা বারবার আশ্বাস ও প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি আজও।

 


সরেজমিন জানা গেছে, শহরের সঙ্গে নোয়াগাঁও, গৌরীবরদী, বিষ্ণাদী, বানেশ্বরদী দলদী, পেকিরচরসহ প্রায় ২০ গ্রামের যোগাযোগের একমাত্র ভরসা পাঁচ টাকার সাঁকো। এসব গ্রামের কয়েক হাজার মানুষকে বাজার-সদাই, স্কুল-কলেজ কিংবা শহরে কোনো কাজে যেতে হয় এই সাঁকো পেরিয়ে। প্রায়ই ঘটে দুর্ঘটনা।

 


স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, আগে মানুষ নৌকায় পারাপার হতো। প্রায় ২০ বছর ধরে বাঁশের সাঁকো দিয়েই মানুষ নদী পার হচ্ছে। যাতায়াতের একমাত্র সাঁকোটি ভেঙেচুরে গেলে আনোয়ার নামের একজন ব্যক্তি নিজ উদ্যোগে সেটি মেরামত করেন। প্রতিবার পারাপারের জন্য জনপ্রতি পাঁচ টাকা নেন তিনি।

 


সরেজমিনে দেখা যায়, নোয়াগাঁও উচ্চবিদ্যালয়ের শত শত শিক্ষার্থী এই সাঁকো দিয়ে পারাপার হয়। অনেক শিশু শিক্ষার্থী বড়দের হাত ধরে সাঁকো পার হওয়ার আশায় দাঁড়িয়ে থাকে কিনারে। দিনের পর দিন এভাবেই চলছে। অনেক অসচ্ছল অভিভাবক সাঁকোর অজুহাতে শিশুকে বিদ্যালয়ে পাঠান না। এখানে একটি সেতু হলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা যেমন বাড়ত, তেমনি টিফিনের সময় তারা বাড়ি গিয়ে খেয়ে আসতে পারত বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।

 


কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, সাঁকো দিয়ে পার হওয়ার সময় পড়ে গিয়ে আহত হয়েছে অনেকে। নিরাপত্তাহীনতার কারণে তাদের অভিভাবকরা এখন আর স্কুলে যেতে দিচ্ছেন না। এতে তাদের পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে। নড়েবড়ে এই সাঁকোর পরিবর্তে তারা সেতুর দাবি জানায়।

 


যুগ যুগ ধরে গ্রামবাসী একটি সেতুর জন্য প্রশাসনে দাবি জানিয়ে আসছে, কিন্তু আশ্বাস ছাড়া আর কিছুই পাননি তারা। এখন আর শুধু আশ্বাস নয়, দুর্ভোগ থেকে পরিত্রাণ পেতে স্থায়ী একটি সেতু নির্মাণের দাবি ভুক্তভোগী এলাকাবাসীর।

 


নোয়াগাঁও ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আতাউর রহমান বলেন, ‘স্থানীয় দিনমজুর আনোয়ার হোসেন নিজ উদ্যোগে সাঁকোটি জনস্বার্থে মেরামত করেন। আমরা এলাকাবাসী তার প্রতি কৃতজ্ঞ। সাঁকোটি দিয়ে প্রায় ২০ গ্রামের হাজার হাজার মানুষ ও শত শত শিক্ষার্থী যাওয়া-আসা করে। কিন্তু সাঁকো পারাপারে ৫ টাকা নেওয়া হয় কি না আমার জানা নেই।’

 


এক প্রশ্নের জবাবে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমি সদ্য ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হয়েছি। বিগত বছরগুলোতে এখানে একটি সেতুর জন্য জনপ্রতিনিধিরা একাধিকবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। বিষয়টি নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব আমি।’

 


সেতু নির্মাণের জায়গাটি পরিদর্শন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন বলে জানান সোনারগাঁ উপজেলা প্রকৌশলী মো. রেজাউল হক। বলেন, অনুমোদন হলে দ্রুত সেতু নির্মাণ করা হবে।

 


সোনারগাঁ উপজেলার নতুন নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা রহমান বলেন, গণমাধ্যমকর্মীদের মাধ্যমে বিষয়টি জেনেছেন তিনি। শিগগির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।       এন. হুসেইন রনী  /জেসি

এই বিভাগের আরো খবর