রোববার   ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪   ভাদ্র ২৪ ১৪৩১

সোনারগাঁয়ে পানি-বায়ু ও শব্দ দূষণের কারণে বিপর্যস্ত পরিবেশ

আশরাফুল আলম, সোনারগাঁ

প্রকাশিত: ২৩ জুন ২০২৪  


সোনারগাঁ উপজেলায় তিন লাখ আটষট্টি হাজার মানুষের বসবাস। অপ্রতুল জায়গায় সোনারগাঁয়ের যত্রতত্র অনেক শিল্পকারখানা ও কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করায় কর্মসংস্থানের পাশাপাশি নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাচ্ছে স্থানীয় ও বহিরাগত মানুষের সংখ্যা। যার ফলে ক্রমেই বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে পর্যটনখ্যাত সোনারগাঁ।  

 

 

অপরদিকে, পর্যটন নগরী ও শিল্পাঞ্চল সোনারগাঁয়ে অপরিকল্পিতভাবে ঘর বাড়ির পাশাপাশি বাণিজ্য প্রসারে রাস্তাঘাট, সেতু, কার্লভাট, বহুতল ভবন, আবাসিক ভবন, বহুতল মার্কেট, ছোট-বড় কলকারখানা ও কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। যার ফলে পানি, বায়ু ও শব্দ দূষণের মাত্রা বেড়েই চলেছে।

 

 

এতে করে সোনারগাঁয়ের সৌন্দর্য বাড়ছেনা বরং দিন দিন অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা নগরীতে পরিণত হচ্ছে সোনারগাঁয়ের পরিবেশ। উপজেলার সর্বত্র অনেক উন্নয়ণ কার্যক্রম পরিলক্ষিত হলেও দিনের পর দিন পরিবেশ বিপর্যের দিকে ধাবিত হচ্ছে পর্যটন নগরী সোনারগাঁ। স্থানীয় সচেতন নাগরিক সমাজের অভিমত, অপরিকল্পিত শিল্পায়ন, দখল ও নানাবিধ দূষণের কারনে সোনারগাঁয়ের নদী খাল বিল পুকুর জলাশয় হারিয়ে যাচ্ছে।

 

 

যা কিছু অবশিষ্ট আছে তা আজ চরমভাবে দূষিত ও হুমকির মূখে জীববৈচিত্র। এছাড়া অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও পরিবেশ দূষণের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে স্বাস্থ্য সেবার ওপর। এমন অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, সোনারগাঁয়ে আগের যেকোন সময়ের তুলনায় সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগের বিস্তার বহুগুণে বেড়ে গেছে।

 

 

অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার ক্ষেত্রে চারদিকের দূষণ সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। প্রতিদিন সরকারী বেসরকারী চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলো রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। তার মধ্যে রয়েছে সরকারী চিকিৎসা সেবার সীমাবদ্ধতা ও অব্যবস্থাপনা।

 


সোনারগাঁ উপজেলার বাড়ী মজলিস এলাকার বাসিন্দা আব্দুল মজিদ বলেন, আমার বাড়ির ডানে-বামে, সামনে ও পেছনে চারদিকে কয়েকটি বহুতল ভবন গড়ে উঠেছে। কিন্তু কেউই নিয়ম মেনে জায়গা ছেড়ে ভবন নির্মাণ করেননি। তাছাড়া উপজেলা সদরের প্রধান সড়কে নিত্যদিন যানজট পানি, বায়ু ও শব্দ দূষণের কারনে অতিষ্ঠ জনজীবন।

 


সোনারগাঁ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেস্যার আশ্রাফুজ্জামান বলেন, দেশের অন্যতম পর্যটন ও শিল্পাঞ্চলখ্যাত সোনারগাঁ এখন পরিবেশ বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছে। অপরিকল্পিত নগরায়ণে যত্রতত্র শিল্পায়ণ, নদী খাল বিলে কারখানার দূষিত বর্জ, প্রাকৃতিক পরিবেশের ক্রমাবনতি, পরিবেশ সম্পর্কিত অসচেতনতা, প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন ও সুষ্ঠু নজরদারির অভাবে সোনারগাঁয়ের প্রাণ-প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র ধ্বংস হচ্ছে। তাই পরিবেশ রক্ষায় দ্রুত প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

 


পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন সোসাইটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসাইন জানান, পরিবেশ দূষণের কারণগুলো হল পানি, বায়ু, মাটি, শব্দ, অবৈধ ইটভাটার আধিক্যতা, প্লাস্টিক ও বর্জ ব্যবস্থাপনার অভাব, ইটিপি প্লান্ট বিহীন অনিয়ন্ত্রিত শিল্পকারখানা স্থাপন, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই কারখানায় বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনকারী কার্যক্রম পরিচালনা।

 

 

তাছাড়া অপরিকল্পিত শিল্পায়নে জনসংখ্যার আধিক্য ও বড় বড় দালানকোঠা গড়ে ওঠার পাশাপাশি, পয়ঃনিষ্কাশন সমস্যা, নানাবিধ দূষণের কারনে রোগব্যাধির প্রাদুর্ভাব, মানসিক ও স্নায়ুবিক চাপ বৃদ্ধি, হৃদরোগ, ক্যান্সার, ডায়াবেটিক, মাদক প্রবণতা বৃদ্ধি, মৃত্যু, সন্ত্রাস ও দূর্ঘটনা ইত্যাদি আরো বেড়ে যাবে। তাই সময় মত প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহন না করলে যার পরিণতি আমাদের আগামী প্রজন্মকে ভোগ করতে হবে।     এন. হুসেইন রনী  /জেসি

এই বিভাগের আরো খবর