বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

সোনারগাঁয়ে সরকারী প্রজ্ঞাপন অমান্য করে দুই শ্রেণির পরীক্ষা গ্রহণ

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২৩ মার্চ ২০২৩  


সোনারগাঁয়ে সরকারী প্রজ্ঞাপন অমান্য করে ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণীতে পরীক্ষা গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে সোনারগাঁয়ের কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।

 

 

বৈদ্যেরবাজার নেকবার আলী মুন্সি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ও সোনারগাঁ পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়সহ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জনপ্রতি ৩শ থেকে সাড়ে ৩শ’ টাকা করে নিয়ে এ পরীক্ষা নিচ্ছেন।

 

 

দুই শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের জন্য পরীক্ষা না নেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। প্রতিষ্ঠান আর্থিকভাবে লাভবানের জন্য প্রতিষ্ঠান প্রধানরা এ নির্দেশনা অমান্য করে পরীক্ষা নিচ্ছেন।  

 

 

ইতোমধ্যে এ অভিযোগের প্রমাণ পেয়ে বৈদ্যেরবাজার নেকবার আলী মুন্সি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. কামাল হোসেনকে শোকজ নোটিশ দিয়েছেন সোনারগাঁও মাধ্যমিক অফিসার মো. সাইফুল ইসলাম প্রধান।  

 

 

এদিকে সরকারী প্রজ্ঞাপনে ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের নতুন শিক্ষাক্রম শিক্ষন শেখানো ও মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য গত ১৩ মার্চ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক প্রফেসর মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপন জারি করেন। এতে কোন প্রকার লিখিত পরীক্ষা না নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। 

 

 

৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের নতুন শিক্ষাক্রম শিক্ষন শেখানো ও মূল্যায়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষক, প্রতিষ্ঠান প্রধান, উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, আঞ্চলিক উপপরিচালক ও আঞ্চলিক পরিচালকে অনুরোধ করেন। 

 

 

জানা যায়, সারা দেশে সরকার নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের জন্য ২০২৩ সালে নতুন কারিকুলামের শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌছে দেয়। এ শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষকদের গত ডিসেম্বর মাসে শিক্ষদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সেই আলোকে প্রতিটি স্কুলের শিক্ষকরা ক্লাস নিচ্ছেন।

 

 

প্রশিক্ষণেও প্রতিটি শিক্ষককে পরীক্ষা না নিয়ে শিক্ষার্থীদের ধারাবাহিক ও শ্রেণীভিত্তিক মূল্যায়ণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। সম্প্রতি ৬ষ্ঠ ও ৭শ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা না নিয়ে মূল্যায়নের জন্য প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই নির্দেশনার কোন প্রকার ব্যত্যয় ঘটলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি দায়ী থাকবেন বলে উল্লেখ করেন।

 

 

তবে এ নির্দেশনা অমান্য করে সোনারগাঁয়ের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক আর্থিক লাভবানের জন্য পরীক্ষার ফি গ্রহন করে পরীক্ষা নিয়েছেন।

 

 

পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে সরাসরি প্রমাণ পাওয়া গেছে সোনারগাঁওয়ে বৈদ্যেরবাজার নেকবার আলী মুন্সি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ও সোনারগাঁও পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে।  

 

 

বৈদ্যেরবাজার নেকবার আলী মুন্সি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ৭ম শ্রেণীতে পড়ুয়া সাতভাইয়া পাড়া গ্রামের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক মো. কাউসার মিয়া বলেন, পাইলট স্কুলের প্রধান শিক্ষক জোরপূর্বক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৩৩০ টাকা করে পরীক্ষার ফি নিয়ে পরীক্ষা নিয়েছেন। সরকারীভাবে নিষেধ থাকলেও তিনি তা মানছেন না। প্রশাসনের বিষয়টি তিনি দেখবেন বলে সাফ জানিয়েছেন। 

 

 

সোনারগাঁ পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ুয়া শিক্ষার্থী বানীনাথপুর গ্রামের অজয় চন্দ্র সরকার বলেন, ক্লাস সিক্সের বাচ্চাদের কাছ থেকে পরীক্ষার নামে ফি নিয়েছেন। শুনেছি পরীক্ষা হবে না। স্কুল থেকে পরীক্ষার ফি ও বেতনের চাপ দেওয়া হয়েছে।

 

 

বৈদ্যেরবাজার নেকবার আলী মুন্সি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য মো. ওমর ফারুক বলেন, আমরা সরকারী নির্দেশনা জেনে প্রধান শিক্ষককে পরীক্ষা না নেওয়ার জন্য বলেছিলাম। তিনি তা শুনেননি। টাকার প্রতি তার অন্য রকম একটা টান আছে। 

 

 

বৈদ্যেরবাজার নেকবার আলী মুন্সি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামাল হোসেন বলেন, পরীক্ষা না নেওয়ার বিষয়ে কোথাও তিনি নির্দেশনা পান নি। সরকারী নির্দেশনা অমান্য করেছেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। তিনি প্রজ্ঞাপন নিয়ে তার সঙ্গে দেখা করার জন্য বলেছেন। 

 

 

সোনারগাঁও পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক মো. মতিয়ার রহমান বলেন, পরীক্ষা নিয়েছি সত্য। সোনারগাঁওয়ের অনেক প্রতিষ্ঠান ফি নিয়ে পরীক্ষা নিয়েছেন। আমারও নিয়েছি। শিক্ষার্থীদের তিন মাসের বেতন আদায়ের কৌশল হিসেবে এ পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। 

 

 

সোনারগাঁও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. সাইফুল ইসলাম প্রধান বলেন, কোনভাবেই দুই শ্রেণীতের পরীক্ষা নেওয়া যাবে না। দুই শ্রেণীতে মূল্যায়নের জন্য প্রজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা অমান্য করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি দায়ী থাকবেন।

 

 

ইতিমধ্যে বৈদ্যেরবাজার নেকবার আলী মুন্সি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে পরীক্ষা নেওয়ার প্রমাণ পেয়ে শোকজ দেওয়া হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো.শরীফুল ইসলাম বলেন, ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণীতে কোনভাবেই পরীক্ষা নেওয়া যাবে না।

 

 

নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের জন্য পরীক্ষা নেওয়া বিধিবহির্ভূত। পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়টি অবগত হয়েছে। উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।  এন.হুসেইন/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর