স্তন প্রদাহ স্তনে মারাত্মক কোন রোগ হওয়ার পূর্ব লক্ষণ। এ রোগের কারণ, হোমিওপ্যাথিতে প্রতিকার ও চিকিৎসা সম্পর্কে জেনে নিন।
প্রথমে হঠাৎ বা আস্তে আস্তে স্তনপ্রদাহ স্তনের অল্প পরিসরে বা পুরো স্তনগ্রন্থিজুরে হতে পারে। প্রদাহের প্রথম অবস্থায় চিকিৎসার মাধ্যমে ভাল না হলে এবং দীর্ঘদিন এরকমের প্রদাহ চলতে থাকলে টিউমার ও স্ফোটক হতে পারে এমনকি উহা পেকে পুঁজ সৃষ্টি করে অবশেষে ক্যানসারের মতো রোগও হতে পারে।
স্তন প্রদাহের কিছু কারণ
রক্তহীনতা, উপদংশন, ঠান্ডা লাগা, পুরাতন উদরাময়, অত্যধিক পরিশ্রম, ক্রমাগত স্তন্যপান করানো, আঘাত পাওয়া ইত্যাদি কারনে এ রোগ হতে পারে। দুগ্ধ নিঃসারক নালিগুলো বন্ধ হয়েও এ রোগ হয়। কনসিপ্ট বা গর্ভধারণের শুরুতে কারও কারও স্তন প্রদাহ ও স্তন ভারি হয়ে উঠতে পারে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ইহা রোগের লক্ষণ নয়। আবার অনেক আটসাট মানে প্রকৃত সাইজের চেয়ে অনেক ছোট ব্রা পরিধান কারার কারণে রক্ত সঞ্চালনে বাধা প্রদান করলে তখন স্তনে প্রদাহ হতে পারে। তবে এ প্রদাহ রোগের লক্ষণ নয়। সাইজমত সফ্ট ও ভাল ব্রান্ডের ব্রা পরলে এ ধরণের প্রদাহ নাও হতে পারে।
লক্ষণ বা উপসর্গ
প্রথমে শীতকরে জ্বর আসতে পারে নাও আসতে পারে। স্তন ফোলে ও ব্যথাযুক্ত হয়, লাল বর্ণ হতে পারে, জ্বালা, ব্যথা ও যন্ত্রণা, সমস্ত স্তন বা আংশিক ফুলে ওঠো ভিতর শক্ত গ্ল্যান্ডের মত অনুভূত হয় এবং সর্বশেষে পুঁজের সঞ্চালন হয়।
কখন হয়
বাচ্চা প্রসবের পরে ও অবিবাহিত অবস্থায়ও মহিলাদের এ রোগ হতে পারে। যৌবন আসার পর থেকে কিশোরী ও যুবতিদের মধ্যে কারও কারও পিরিয়ড চলাকালিন বা তার কয়েকদিন আগে বা পরে স্তনে ব্যথা হতে পারে, তবে তা মারাত্মক আকারে নয় এবং তা পিরিয়ডের পরে সেড়ে যায়। এটা হরমোনজনিত কারণে হয়ে থাকে। যদি পিরিয়ডের পরে না সারে তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
টেস্ট বা পরীক্ষা
প্রাথমিক চিকিৎসার পরে স্তন প্রদাহের আসু উপকার না হলে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রোগ নির্ণয় করতে হবে। প্রাথমিকভাবে সিবিসি,আল্ট্রাসনোগ্রাম,ম্যামোগ্রাম ইত্যাদি করাতে হবে।
চিকিৎসা
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় স্তন প্রদাহ আরোগ্য হয়। স্তন প্রদাহে হোমিওপ্যাথিক ওষুধ খুবই কার্যকরী এবং মন্ত্রের মত কাজ করে। লক্ষণানুসারে সঠিক ওষুধ নির্বাচন করে সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করতে পারলে অল্প সময়ের মধ্যেই প্রদাহের তীব্রতা কমে আসবে এবং ৭ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে রোগটি স্থায়ীভাবে আরোগ্য হয়। প্রাথমিকভাবে ব্রায়োনিয়া এল্ব, হিপার সাল্প, ফাইটোলক্কা, রাস টক্স, বেলেডোনা ইত্যাদি ওষুধ লক্ষণানুসারে যেকোন ১টি বা ২টি ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করতে পারেন । কিন্তু রোগের তীব্রতা হ্রাস-বৃদ্ধি, রোগের কারণ ও উৎস অনুসন্ধান, রোগীর আহার নিদ্রা, রুচি অরুচি, ঠান্ডা-গরমে ও নড়াচড়ায় রোগের হ্রাস বা বৃদ্ধি, ধাতুগত ও মানসিক লক্ষণ ইত্যাদি উপসর্গ অনুসারে উক্ত ওষুধের ডোজ, মাত্রা, শক্তি, এজন চিকিৎসকই নির্ধারণ করতে পারেন। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খাওয়া দরকার ।
সতর্কতা
ক্রমাগত বা মাঝে মাঝে স্তন প্রদাহ হলে, অবহেলা না করে আপনার নিকটবর্তী রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ নিন নতুবা ভবিষ্যতে টিউমার, স্ফোটক বা ক্যান্সারের মত মারাত্মক সমস্যা হতে পারে।
ডা. জিএম খায়রুজ্জামান
মোবাইলঃ ০১৭ ৪৩ ৮৩ ৪৮ ১৬