শনিবার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৪   পৌষ ৭ ১৪৩১

স্বৈরাচার সরকারের একটি সাজানো নাটকের যবনিকা

যুগের চিন্তা রিপোর্ট :

প্রকাশিত: ৩০ অক্টোবর ২০২৪  

# মামুনুলকে দমাতে তার বিরুদ্ধে ৪১টি মামলা করে হাসিনার সরকার
# ধর্ষণ মামলা ছাড়াও ছিল একটি হত্যা মামলা
# আমার চরিত্র হরণের জন্য গোটা রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করেছে : মামুনুল হক

 
 
কথায় বলে `পাপ ছাড়ে না বাপকে'। স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারকে সেই পাপেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হতে হয়েছিল বলে মনে করা হয়। গত ৫ আগস্ট দেশের ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনে কোন উপায় না পেয়ে মাত্র ৪৫ মিনিটের নোটিশে পালিয়ে যায় বাংলাদেশের প্রচন্ড দাপুটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরই মধ্যে এই সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাংকের টাকা লুট-পাট করা, প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলোকে নিশ্চিহ্ন করা, বিরোধী দলীয় নেতা কর্মীদের গুম-খুন ও অত্যাচার চালানোসহ বাংলাদেশের প্রতিবাদী ও স্পষ্টভাষী ওলামা মাশায়েখদের বিভিন্নভাবে হয়রানি ও নির্যাতনের ঘটনাও কম হয়নি। 

 

সর্বশেষ মেট্রোরেল নিয়ে নাকটবাজীও কম হয়নি, যা বর্তমান সরকারের বিভিন্ন কর্মতৎপরতায় এদেশের জনগণের সামনে উঠে এসেছে। এর মধ্যে একটি অন্যতম আলোচিত ঘটনা হলো হেফাজতের যুগ্ম সম্পাদক (তৎকালীন) এবং খেলাফত মজলিসের মহাসচিব (বর্তমান) মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা।  যা দেশজুড়ে শুধু আলোচনাই সৃষ্টি করেনি, সৃষ্টি হয়েছে সমালোচনারও। নিজ স্ত্রীকে নিয়ে সোনারগাঁয়ের একটি রিসোর্টে অবস্থানকালে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী তাদের অবরুদ্ধ করে রেখে কোন প্রকার আত্মপক্ষ সমর্থন করার সুযোগ না দিয়ে তার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়। তবে স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর অবশেষে সেই সাজানো নাটক থেকে মুক্তি পেলেন মামুনুল হক। গত ২৪ অক্টোবর মামুনুল হককে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত। আর এরই মধ্য দিয়ে কিছুটা হলেও দায় মুক্তি হলো জাতির।


 
বিগত আওয়ামী লীগের আমলে শেখ হাসিনা সরকার হেফাজতের তৎকালীন এই প্রতিবাদী নেতাকে দমিয়ে রাখতে নানা অপকৌশল অবলম্বন করে বলে দাবি ছিল হেফাজত নেতাদের। হাসিনার সরকার মামুনুল হকের নামে মোট ৪১টি মামলা দায়ের করে বলে জানা গেছে। যার মধ্যে এই ধর্ষণ মামলা ছাড়াও ছিল একটি হত্যা মামলা। একের পর এক মামলা দিয়ে এই আলেমকে মামলার জালে ফাঁসিয়েছিল আওয়ামী লীগ। এমনকি নিজের স্ত্রীকেও বাধ্য করা হয় স্বামীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা দিতে। এর মাঝে তিন বছরেরও বেশি সময় কারাগারে থাকার পর গত ৩ মে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান মামুনুল হক। অবশেষে নিষ্পত্তি হয়েছে তার বিরুদ্ধে করা মামলাগুলো।


 
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানায় দায়ের করা ধর্ষণ মামলায় বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হককে অবশেষে খালাস দিয়েছেন আদালত। ২৪ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালত তাকে খালাস দেন। মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হকের বিরুদ্ধে আনা ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত তাকে নির্দোষ ঘোষণা করে খালাস প্রদান করেছেন।


 
এই বিষয়ে গণমাধ্যমকে মামুনুল হক বলেন, শেখ হাসিনা আমার চরিত্র হরণের চেষ্টা করেছিলেন। একজন মানুষের চরিত্র হরণ করার চেষ্টা করা চরিত্রবান মানুষের কাজ হতে পারে না। তিনি আমার চরিত্র হরণের জন্য গোটা রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করেছেন। তিনি আরও বলেন, অন্যায়ভাবে আমাদেরকে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। যখন ন্যূনতম প্রতিবাদটুকু করতে গিয়েছি, তখনই আমাদেরকে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারারুদ্ধ করা হয়েছে।


 
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রয়েল রিসোর্টে এক নারীর সঙ্গে অবস্থান করছিলেন মামুনুল হক। ওই সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এসে তাকে ঘেরাও করে। পরে স্থানীয় হেফাজতের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা এসে রিসোর্টে ব্যাপক ভাঙচুর করেন এবং তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যান। এরপর ১৮ এপ্রিল মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় মামুনুলকে। পরে এই ঘটনায় ৩০ এপ্রিল সোনারগাঁ থানায় মামুনুল হকের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ মামলা করেন ওই নারী। তবে ওই নারীকে তার দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করে আসছেন মামুনুল হক।