রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

সড়ক দখল করে পার্কিংয়ে বাড়ছে যানজট

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৩ জানুয়ারি ২০২৩  


যানজট নারায়ণগঞ্জবাসীর নিত্য দিনে সঙ্গী। তবে রাস্তার পাশে ফুটপাত দখল ও অবৈধ গাড়ি পার্কিংয়ে এ দুঃসহ যানজট যেন দিন দিন বেড়েই চলছে। কর্তৃপক্ষের বার বার হুশিয়ারি বা অনুরোধ সত্ত্বেও কিছুতেই কমছে না অবৈধ গাড়ি পার্কিং। ফলে যানজট আরো তীব্র হচ্ছে।

 

 

ঢাকা-মুন্সীগঞ্জ ব্যস্ত সড়কের অ্যাডভেঞ্চার পার্ক সংলগ্ন দুই পাশে প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের গাড়ি পার্ক করে রাখা হয়। ফলে এই এলাকার যাতায়াতকারীদের প্রতিনিয়তই পড়তে হয় যানজটে। বিশেষ করে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত একই অবস্থা বিরাজ করে। এই সড়কসহ আশেপাশের এলাকার প্রতিটি সড়কের দুই দিকে একই অবস্থা।  

 

 

পোস্তগোলায় অফিস শেষে প্রতিদিন মুক্তারপুরে বাসায় ফিরেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মিজানুর রহমান। যানজটের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, প্রতিদিন আমাদের এই সড়কের যানজটে যে সময় ব্যয় হচ্ছে, অন্য দেশে বিমানে করে যাওয়া শুধু নয় ফিরেও আসা সম্ভব। তিনি আরো বলেন, এই এলাকায় যানজটের প্রধান কারণ রাস্তায় গাড়ি পার্কিং। রাস্তার দুই ধারে বিভিন্ন রকমের গাড়ি পার্কিং করায় এ যানজটের সৃষ্টি।

 

 

বিসিক থেকে ফতুল্লা পর্যন্ত হেঁটে যেতে সময় লাগে প্রায় ১৫ মিনিট। কিন্তু যানজটের কারণে একই পথ রিকশায় কিংবা বাসে পাড়ি দিতে লাগে আধা ঘণ্টা। যেখানে গাড়িতে করে দ্রুত পৌঁছানোর কথা, সেখানে সময় লাগছে দ্বিগুনেরও বেশি।

 

 

শিল্পাঞ্চল বিসিকের বিভিন্ন গার্মেন্টস কারখানা সহ বিভিন্ন অফিস শুরু আর শেষ হওয়ার পর রাস্তায় গাড়ির চাপ বাড়লে গন্তব্যে পৌঁছাতে সময় আরও বেশি লাগছে। এমনিতেই সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবসহ নানা কারণে যানজট নগরবাসীর নিত্যসঙ্গী হয়ে পড়েছে। তার ওপর রাস্তা দখল করে অবৈধভাবে পার্ক করা হচ্ছে গাড়ি। এতে নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে নগরবাসীকে।

 



ঢাকা-মুন্সিগঞ্জ সড়কের অ্যাডভেঞ্চার পার্ক সংলগ্ন সড়কে সরেজমিনে দেখা যায়, রাস্তার অর্ধেকেরও বেশি জায়গাজুড়ে অবৈধভাবে গাড়ি পার্ক করে রাখা হয়েছে। এই সড়কের এনায়েত নগর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে অ্যাডভেঞ্চার ল্যান্ড পার্কের মোড়, মেথরখোলা পর্যন্ত অবৈধ পার্কিংয়ের তালিকায় রয়েছে মোটরসাইকেল, বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও সিএনজি।

 

 

গাড়িচালকদের অভিযোগ, পার্কিংয়ের জায়গা না থাকায় তাঁরা রাস্তায় গাড়ি রাখতে বাধ্য হচ্ছেন। আবার কারো কারো অভিযোগ, মেথরখোলা সংলগ্ন ট্রাকে স্ট্যান্ডে জায়গা না থাকায় তারা এখানে গাড়ি পার্কিং করে রেখেছে। আবার কয়েকজন গাড়ি চালকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের গাড়িগুলো স্ট্যান্ডার গাড়ি নয়। তারা সম্পূর্ণ অবৈধভাবে রাস্তার দুই ধারে গাড়িগুলো পার্কিং করে রেখেছে।

 



পার্কিংয়ে রাখা একটি ট্রাকের চালক রহমান বলেন, পাশের মার্কেটে মালামাল রাখতে গাড়ি থামিয়ে রাখছি। মার্কেটে তো আর পার্কিংয়ের জায়গা নাই। থাকলে তো আর আমি এইখানে গাড়ি রাখতাম না।

 



বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পার্কিং নৈরাজ্য বন্ধ করতে নগরীর প্রতিটি ভবন নির্মাণকালে গাড়ি পার্কিংয়ের পর্যাপ্ত জায়গা রাখা হচ্ছে কি না, তা নিয়ে সিটি করপোরেশন ও রাজউকসহ সংশ্লিষ্টদের নজরদারি আরও বাড়াতে হবে।

 


নারায়ণগঞ্জ কলেজের ছাত্র সানি বলেন, এই সড়কের ভয়াবহ যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ সড়কের উপর গাড়ি পার্কিং। ঢাকা মুন্সীগঞ্জ সড়কের ব্যস্ততম এই পয়েন্টটি এখন গাড়ি রাখার স্থানে পরিণত হয়ে আসছে। এর সাথে যত্রতত্র বাস, কার, মাইক্রোবাস ও পিকআপ ভ্যান পার্ক করার ফলে সড়কে যানচলাচলের পথ কমে গেছে।

 

 

অন্যদিকে, পথচারি হাঁটার স্থান দখলে রেখেছে হকাররা। এ কারণে যানবাহন ও পথচারী চলাচলে বিঘ্ন ঘটে সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ যানজটের। বাড়ছে ভোগান্তি, নষ্ট হচ্ছে বিপুল কর্মঘণ্টা।

 

 

ইসমাইল হোসেন নামের একজন কলেজ শিক্ষক জানান, যানজট নাগরিক জীবনে এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এটা যেন জীবনের অংশ হয়ে গেছে। তাই জনদুর্ভোগ চরমে উঠলেও এ নিয়ে কোথাও কোনো রা শব্দটি নেই। যানজটের প্রধান কারণ অবৈধ পার্কিং। নারায়ণগঞ্জের যেকোনো সড়কে দেখা যাবে রাস্তার দু’দিক ঘিরে আছে শত শত গাড়ি।

 

 

এসব পার্কিয়ের জন্য টাকাও নেয়া হয়। কারা এ টাকা নেয় তা কেউ জানে না। এসব কারণেই এসব অব্যবস্থা টিকিয়ে রাখা হয়। সবমিলিয়ে বলা যায় যানজট নিরসনে কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা নেই। ফলে দুর্ভোগ বাড়ছেই। কোনো গন্তব্যে যেতে দু’ঘণ্টা আগে রওয়ানা হয়েও স্বস্তি নেই।

 

 

নারায়ণগঞ্জ শহরে হাজার হাজার ট্রাক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে টার্মিনাল ছাড়াই। সারি সারি ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও পিকআপের ছড়াছড়িতে শুধু যানজটই সৃষ্টি হচ্ছে না, জননিরাপত্তাও হুমকির মুখে ফেলেছে। যত্রতত্র অবৈধ পার্কিংয়ের দরুন যানজট চলে যায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ফুটপাতও দখল করে রাখেন ট্রাকের মালিকরা।

 

 

অবস্থা এমন যে, অবৈধ পার্কিংয়ে সড়ক যেন অঘোষিত ‘ট্রাকস্ট্যান্ডে পরিণত হয়েছে। রাস্তার ওপর অবৈধ গাড়ি পার্কিং ও মোড়ে এলোমেলোভাবে গণপরিবহনের যাত্রী ওঠানামার কারণে নগরে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এ ছাড়া ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার দুর্বলতাও যানজট বাড়াচ্ছে বলে মনে করছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞ, ব্যবসায়ী নেতা ও ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা।

 

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শহরে সুনির্দিষ্ট পার্কিং ব্যবস্থা না থাকায় মানুষ রাস্তাতেই পার্কিং করে। তা ছাড়া অফিস এবং ব্যবসা-বাণিজ্য চলাকালে ৮০ ভাগ গাড়ি রাস্তায় যত্রতত্র পার্কিং করা হয়। শুধু তা-ই নয়, সেগুলো থেকে নিয়মিত টোলও আদায় করা হয়।

 

 

পরিশেষে দেশে যে ট্রাফিক আইন আছে তা শতভাগ কার্যকর করতে হবে। কোন রাস্তায় কোন ধরনের গাড়ি চলতে পারবে সেসব ঠিক করা দরকার। আইনের শতভাগ প্রয়োগ ও জনসচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি পরিবহন ব্যবস্থায়ও পরিবর্তন আনতে হবে।এন.এইচ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর