সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১

সড়ক বিক্রি করে কোটি টাকার মালিক

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১  

# কাঁচামাল থেকে শুরু করে চোরাই পণ্য সবই মিলে সড়কের ফুটপাতে


# অলিতে গলিতে দৌড়ঝাঁপ আর পুলিশকে বোকা বানাতে দিন ভর চলে নানা কৌশল


# রাজনৈতিক নেতা, বড়ভাই, অমুক তমুকের পরিচয়ে গোপনে হয় অনেক তদবিরও



চাষাঢ়া থেকে নিতাইগঞ্জ মাত্র এক কিলোমিটার বঙ্গবন্ধু সড়ক। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত সড়কটি দিয়ে হাজারো যানবাহনের চলাচল। তাই শহরবাসীর কাছে প্রধান সড়ক হিসেবে পরিচিত এই রাস্তাটি। তবে এক শ্রেণীর ভাড়াটের কাছে এ সড়ক তাদের মূল পুঁজি। কারণ সড়কের জায়গা বিক্রি করে তাদের কামাই কোটি টাকা। ভোর ৫ টা থেকে রাত ২টা পর্যন্ত সড়কের অন্তত হাজারো জায়গা ভাড়া দেয়া হয়। কাঁচামাল থেকে শুরু করে চোরাই পণ্য সবই মিলে সড়কের ফুটপাতে। অলিতে গলিতে দৌড়ঝাঁপ আর পুলিশকে বোকা বানাতে দিন ভর চলে নানা কৌশল।

 

রাজনৈতিক নেতা, বড়ভাই, অমুক তমুকের পরিচয়ে গোপনে হয় অনেক তদবিরও। ফলে রাতে সড়কটি অনেকটা ফাঁকা থাকলেও দিনে দীর্ঘ যানজট লেগেই থাকে। এই তো চলছে গত ১০ বছর ধরে বঙ্গবন্ধু সড়কে। অনুসন্ধানে বেড়িয়ে এসেছে সড়ক ভাড়া দিয়ে কিভাবে হয় চাঁদাবাজি। এলাকার উপর নির্ভর করে নির্ধারিত হয় জায়গার দাম। পাঁচ টাকা থেকে শুরু করে পঞ্চাশ হাজার টাকা পর্যন্ত এ সড়কের তিন ফুট জায়গা বিক্রি হয়। তবে সেই টাকা আদান প্রদান করা হয় গোপনে। তাই অনেকে নানা চাপে পড়ে জায়গা হারালেও কিছুই করার থাকে না কিন্তু তারপরও রাস্তা ফাঁকা নেই। একজনকে হাটিয়ে অন্য জনের দখল যায় টাকার বিনিময়ে। এভাবে করে সড়কের জায়গা বিক্রি চাঁদার টাকা অনেকেই কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তাদের মধ্যে কাউকে কাউকে আবার বিভিন্ন মিছিল মিটিংয়ে দেখা যায়। এমনকি নেতাদের সাথে ছবিও থাকে তাদের রূপ।

 


অনুসন্ধান বলছে, নিতাইগঞ্জে আসা পন্যবাহী গাড়ি মালপত্র খালাস করে ফেরার পথে সেখানে টাকা দিতে হয়। ডিআইটি মসজিদের সামনে আরেক ছদ্মবেশীরা টাকা আদায় করে। মন্ডলপাড়ায় বাঁশ দিয়ে এক পাশ বন্ধ করে অবৈধ ইজিবাইকের স্ট্যান্ডের চালকদের কাছ থেকে টাকা নেয়া হয়। রাতে চোরাই পন্য বিক্রয় কারীদের কাছ থেকে সেখানে আরেক দফা চাঁদা তুলে। করিম মার্কেটের পেছনে পুরো সড়ক বিক্রি করে দেয়া হয়েছে ফুটপাত দখলকারীদের কাছে। দুই নম্বর গেটে এপর উপার শুধুই টাকার খেলা। দর্জি থেকে শুরু করে পুরান জুতা বিক্রেতা সবার কাছ থেকেই নেয়া হয় চাঁদা। উকিলপাড়ায় প্রতিদিন সড়ক বিক্রি হয় নতুন নতুন ক্রেতার কাছে। ভোর ৫ টা থেকে সকাল ৯ টা পর্যন্ত তিন দফায় বিক্রি হয় সড়কের জায়গা। এরপর থেকে চাষাঢ়ার মোড় পর্যন্ত আলোচিত নানা চাঁদাবাজদের দখলে।

 

         
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, যারা সড়কের জায়গাগুলো বিক্রি করে টাকা নেন। তাদের মধ্যে অধিকাংরা বাইরের। অন্য জেলা থেকে এ শহরে এসে ছলে বলে কৌশলে ভাড়ার নামে সড়কের জায়গা বিক্রি করে। এমনকি এক সময়ে বিএনপির রাজনীতি করা ব্যক্তিরা বর্তমানে সরকার দলের স্থানীয় নেতাদের ছায়ায় আনন্দে আছে সড়কের চাঁদা পেয়ে। কারণ রাত পোহালেই তাদের পকেটে যায় চাঁদার টাকা। আর সেই টাকা দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় জায়গা কিনে বাড়ি করেছেন অনেকে। মালিক হয়েছেন কোটি টাকার।

 


বিষয়টি নিয়ে গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করার সময় তিনি নিজেও হতাশা ব্যক্ত করেন। বলেন, তিনি এ জেলায় আসার আগে থেকে এভাবে চলছে সব কিছু। পুলিশ এগুলো পরিবর্তন করতে চায়। তবে সব মিলিয়ে শেষ পর্যন্ত  কি হয় তা তো আপনারাই দেখেন। তিনি বলেন, আমরা সব সময় চেষ্টা করে যাই কিন্তু শুধু আমাদের চেষ্টা করলে তো হবে না, সবার চেষ্টা করতে হবে তাহলে শুধু সড়কের চাঁদাবাজ নয় সব অপকর্মের সাথে জড়িতরা আইনের আওতায় আসবে।
 

এই বিভাগের আরো খবর