শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

সড়কে বসাকে কেন্দ্র করে বিভক্ত হকাররা

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৫ মার্চ ২০২৪  

 

# আন্দোলনে ঐক্য থাকলেও ফুটপাতে বসার জায়গা নিয়ে দ্বন্দ্ব

 

সকল জল্পনা-কল্পনা কাটিয়ে আন্দোলন সংগ্রামের পর নানা হুঁশিয়ারি ও আল্টিমেটাম দেয়ার পরে এমপি সেলিম ওসমানের শর্ত মেনে ফুটপাতে বসেছে হকাররা। গত ৩ ফেব্রুয়ারি গোলটেবিল বৈঠকের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু সড়কের ফুটপাতে বসতে না দেয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তারই ধারাবাহিকতায় দেড় মাস আন্দোলন সংগ্রামের পর চাষাড়া থেকে খানপুর সলিমুল্লাহ রোডে হকারদের বসার ব্যবস্থা করেন সাংসদ সেলিম ওসমান।

 

কিন্তু গতকাল এখানে বসতে গিয়ে হকারদের মাঝে দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন। এতে করে কয়েকজন হকার আহত পর্যন্ত হন। আবার অনেক হকার বলছে এত আন্দোলন সংগ্রাম করে বসার জায়গা পেলেও সেখানে বসা নিয়ে দুই গ্রুপের মাঝে মারামারির ঘটনা ঘটে।  

 

এদিকে পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখেই নিজ নিজ পসরা সাজিয়ে বসতে যাচ্ছেন তারা। হকারদের তালিকা অনুযায়ী বিতরণ করা হচ্ছে ২ হাজার ২০০ কার্ড। এই কার্ডধারী হকাররা নবাব সলিমুল্লাহ সড়কে বসার অনুমতি পেয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) নগরীর নবাব সলিমুল্লাহ সড়কে ২ পাশে বসে কেনাবেচায় নিয়ে স্থান নির্ধারণ করছে হকাররা। তালিকা অনুযায়ী বিশেষ কার্ড সংগ্রহ করতে ভিড় জমাচ্ছেন নগরীর হকার কার্যলয়ে।

 

ইতিমধ্যে যারা কার্ড সংগ্রহ করেছেন তাদের মধ্যে স্বস্তির চিহ্ন লক্ষ করা যায়। পরিবার নিয়ে ঈদ উপভোগ করতে পারবো বলে জানিয়েছে একাধিক হকাররা। তবে জানা যায় লিস্ট অনুযায়ী যখন হকাররা বসতে যায় তখন চাষাঢ়া সলিমুল্লাহ রোডের হকার্স মার্কেটের সভাপতি ডালিম, রাজন, নজরুলের নেতৃত্বে হামলা হয়। তাদের দাবী এখানে অন্য হকাররা এসে বসতে পারবে না। বসলে তাদের ক্ষতি হতে পারে।

 

অথচ এখানে বসার জন্য বঙ্গবন্ধু সড়কের হকারদের বসার জন্য ব্যবস্থা করেন সাংসদ সেলিম ওসমান। এই ঘটনায় হকারদের মাঝে দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়েছে। এক গ্রুপ হকার্স নেতা রহিম মুন্সি আর আসাদের নেতৃত্বে রয়েছে। আরেক গ্রুপ হকারর্স মার্কেটের নেতা ডালিম, নজরুলের নেতৃত্বে। এই দুই গ্রুপের মাঝে বসা নিয়ে মারামারির ঘটনা ঘটে।

 

হকারনেতা রহিম মুন্সি জানান, হকারর্স মার্কেটের সভাপতি ডালিমের নেতৃত্বে আমাদের হকারদের উপর হামলা হয়। তারা বলে আমাদেরকে এখানে বসতে দিবে না। প্রয়োজনে সব কিছু ভেঙ্গে ফেলে দিব। যখন আমাদের করার চকি নিয়ে বসতে যায় তখন তার হামলা চালায়। তাই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমরা কঠোর দাবি জানাই।

 

আরেকজন হকার রনি বলেন, যেভাবে প্রশাসন বলছে সেভাবে আমরা ব্যবসা চালাতে পারলেই হলো। তাহলে পরিবার নিয়ে ঈদ করতে পারবো ইনশা-আল্লাহ। তবে এখানে বসা নিয়ে হকারদের মধ্যে কিছু ঝামেলা হচ্ছে। আগে বঙ্গবন্ধু সড়কে থাকাকালীন সময় এলাকা ভিত্তিক নানা গ্রুপে ভাগ হয়ে যায় হকাররা। যেমন কালিবাজার এক গ্রুপ আবার ২নং রেল গেইট এক গ্রুপ এমন ভাবেই ভাগ হয়ে গেছে। এখন ফুটপাতে বসার স্থান নির্ধারণ নিয়ে গ্রুপে গ্রুপে ঝামেলা হচ্ছে। তবে নেতারা বলেছেন তারা কার্ড বিতরণের পর এই গুলো নিয়ে কথা বলবেন।

 

এদিকে এই ঘটনার পরপরই পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় চারজনকে আটক করা হয়। আহতরা হলেন, মুসা, বিল্লাল, আমিন, আলামিন।

 

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য অনুযায়ী দীর্ঘদিন ধরে নগরীর বঙ্গবন্ধুকে সড়কের ফুটপাত দখল করে হকারা জনসাধারণের চলাচলে ব্যাঘাত ঘটিয়ে আসছিলো। সম্প্রতি স্থানীয় দুই এমপি, সিটি কপোরেশনের মেয়র ও প্রশাসনের সমন্বয়ে হকারদের বঙ্গবন্ধু সড়ক থেকে সরে যেতে বলা হয়। এদিকে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে হকাররা নবাব সলিমুল্লাহ সড়ক দখলের ফুটপাত দখলে নিয়ে দোকান বসাতে থাকে। তখন ফুটপাতের জায়গা নিয়ে তাদের মারামারির ঘটনা ঘটে। এ সময় কথিত হকার নেতা আসাদ গ্রুপের চার হকারকে পিটিয়ে আহত করে অন্য গ্রুপের সদস্যরা।

 

সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি শাহাদাত হোসেন জানান, আহতদের উদ্ধার করে নগরীর ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট খানপুর হাসপাতালে নেয়া হয়। তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় চিকিৎসক তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। হকারদের মারামারির ঘটনায় চারজনকে আটক করা হয়েছে। পুলিশ গিয়ে শান্ত করেছে। থানায় মামলা দায়ের পর পরবর্তী আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে ঘটনার পর থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত হকারদের একটি অংশ মিছিল নিয়ে গিয়ে সদর মডেল থানা এলাকায় অবস্থান নেয়। এস.এ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর