রোববার   ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪   ভাদ্র ২৪ ১৪৩১

২’শ বছরের পুরনো কায়েতপাড়ার নৌকার হাট

রূপগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৩ জুলাই ২০২৪  

 

রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া বাজারের ২শ বছরের পুরনো নৌকার হাটে এখনো বসে সাপ্তাহিক হাট। যেখানে পাওয়া যায় অল্প মূল্যে কারিগরদের তৈরী করা মৌসুমী কোষা নৌকা। প্রতি সপ্তাহে শনি ও বৃহস্পতিবার বসা এ হাটে বিক্রি হয় শত শত নৌকা। যদিও কালের বিবর্তে আধুনিকতার ছোঁয়ায়  কমে যাচ্ছে নৌকা সংশ্লিষ্টদের ব্যস্ততা।

 

 

নারায়ণগঞ্জের  রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া একটি গ্রাম ও ইউনিয়নের নামে হলেও ভৌগোলিকভাবে   কায়েতপাড়া বাজারের অবস্থান বালু নদীর পশ্চিম পাড়ে। যা রাজধানীর খিলগাঁও থানার ৭৫ নং ওয়ার্ড। আর এখানেই গড়ে ওঠে প্রাচীনকাল থেকে সওদা পাতির হাট। এক সময় বড় নৌকা তৈরী ও হাট বসে বিক্রি হতো। কিন্তু এখন শুধু ছোট নৌকার হাট বসে সপ্তাহে দুদিন।

 

 

শনি ও বৃহস্পতিবার আশপাশের জলাবদ্ধ এলাকা ও নদী পাড়ের লোকজন বর্ষা এলেই নৌকা কিনতে আসেন এখানে।  তবে স্থানীয়রা নৌকার পরিবর্তে চান টেকসই স্থায়ী সড়ক। পাশাপাশি বালু নদীর উপর ব্রিজ হলে নৌকা নির্ভরতা কমে যাবে বলে মনে করেন তারা।

 


কোষা নৌকার কদর বাড়ে কেবল বর্ষা এলে। ৩ মাস থাকে এসব নৌকার চাহিদা। কারিগররা প্রতি সপ্তাহে প্রায় ২০ থেকে ২৫টা কোষা তৈরী করতে পারেন। প্রথমে কাঠ চিরাই করে,আকারে নকশা করেন কারিগররা। পরে কাঠ বসিয়ে তার কাটা লাগিয়ে দেন জোড়ায় জোড়ায়। পরে পুডিং করে আলকাতরা লাগিয়ে পানি প্রবেশ বন্ধ করা হয়। এসব নৌকা কোনটা টিকে ২ বছর কোনটা আবার ১০ বছরেও নষ্ট হয় না।

 

 

একটি নৌকা তৈরীতে সময় লাগে মাত্র কয়েক ঘন্টা। এসবের একেকটার দাম হাঁকা হয় ৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা। আকার ভেদে,কাঠের মান ও ডিজাইন বিবেচনায় এসব নৌকার দাম নির্ধারন হয় বলে জানিয়েছেন নৌকার হাট সংশ্লিষ্টরা। কাঠের কারিগর ব্যয় আর ইজারা প্রদানসহ নানা খরচেরও রয়েছে ফিরিস্তি,,,

 


নৌকার হাট ইজারাদার খলিললুর রহমান বলেন, কায়েতপাড়ার এ নৌকার হাট রক্ষার চেয়ে স্থানীয়দের দাবী রাস্তা ঘাট,ব্রিজ কালভার্টের।  রাজধানীর খিলগাঁওয়ের ৭৫ নং ওয়ার্ডে থাকলেও নৌকায় চলাচল মেনে নিতে পারছিনা। তবে নদী ও খাল বিলের বাহন কোষার কদর বাড়লেও কারিগরের  অভাব রয়েছে বেশ। ক্রমেই কমতে শুরু করেছে কারিগর ও নৌকা ব্যবসায়ী ও ব্যবহারকারীর সংখ্যা। হাটটির জৌলুশ নাই আগের মতো। তাই রাজস্ব আহরনও কমে গেছে।

 


কায়েতপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জায়েদ আলী বলেন রাজধানীর শেষ সীমান্তে বালু নদীর পারের নৌকার হাটে টিকে থাকা কারিগর ব্যবসায়ীদের পেশা বদলের হিড়িক পড়েছে। তাই অচিরেই হারিয়ে যেতে বসেছে এ শিল্প।  জলাশয়ের একমাত্র বাহন নৌকা তৈরীর এমন চিত্রও দেখা যায় না খুব একটা। তবে এ শিল্প রক্ষার দাবী করছি। ২শ বছরের পুরনো কায়েতপাড়ার হাট রূপগঞ্জের জনগণই জমায়।

 

 

এখন রূপগঞ্জের রাস্তা ঘাট হওয়াতে কোষা নৌকার চাহিদা কম। কিন্তু ঢাকা জেলা অংশে বহু গ্রামে হেটে আর নৌকায় যাতায়াত করতে হয়। সেখান রাস্তা ঘাট হয়নি। তবে আফতাব নগর থেকে গাউছিয়া সড়ক ও বালু নদীর উপর থাকা সেতুটি হলে সমস্যার দূর হবে।      এন. হুসেইন রনী  /জেসি

এই বিভাগের আরো খবর